অ্যান্টিবডি টেস্টের নীতিমালা চূড়ান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: র‌্যাপিড টেস্টিং অ্যান্টিবডি কিট ব্যবহারের নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে এ কিট ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে। এ কিট নভেল করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, তা নির্ণয়ের জন্য এ কিট ব্যবহার করা হবে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা এ কিট ব্যবহারের নীতিমালা করেছি সার্ভেইলেন্সের জন্য। কভিড-১৯-আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হলে তার রক্তে ইমিউনিটি তৈরি হলো কি না তা অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় বোঝা যাবে। অ্যান্টিবডি থাকলে তিনি প্লাজমা দিতে পারবেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমে সম্ভাব্য প্লাজমাদাতাদের চিহ্নিত করা সহজ হবে।’

তিনি বলেন, গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস একটি র‌্যাপিড টেস্টিং কিট তৈরি করলেও ‘মানোত্তীর্ণ’ হয়নি বলে তাদের অনুমতি দেওয়া যায়নি। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই কিট আমদানির অনুমতি চেয়েছে। এ অবস্থায় কী কী শর্ত পূরণ করতে পারলে কিট অনুমোদন দেওয়া যাবে, তা ঠিক করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। সে কারণেই বিশেষজ্ঞ কমিটি বৈঠক করে একটা নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে।

কভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সির ক্ষেত্রে ওষুধ, ইনভেস্টিগেশনাল ড্রাগ, ভ্যাকসিন এবং মেডিকেল ডিভাইস মূল্যায়নের জন্য ১৪ সদস্যের এই কমিটি করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন গত ৪ জুন গঠিত এই কমিটির সদস্য সচিব।

বিএসএমএমইউ, আইসিডিডিআর,বি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিনের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রয়েছেন এই কমিটিতে। ২১ ও ২৩ জুন দুই দফা বৈঠক করে কমিটি এই নীতিমালা চূড়ান্ত করে।

সেখানে বলা হয়েছে, সেরো সার্ভেইল্যান্স এবং কনভালসেন্ট প্লাজমা থেরাপি ও গবেষণার কাজে র‌্যাপিড টেস্টিং অ্যান্টিবডি কিট ব্যবহার করা যাবে। ‘অপব্যবহার’ রোধে শুধু ল্যাবরেটরিতে এই কিট ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যাবে।

কিটের মোড়কে লেখা থাকতে হবে‘দিস ইজ নট এ ডায়াগনস্টিক কিট, দিস কিট উইল বি ইউজড অনলি ফর ডিটেক্টিং অ্যান্টিবডি, নট ইন অ্যাকিউট স্টেজ।’

নীতিমালায় বলা হয়েছে, এসব কিট ‘পয়েন্ট অব কেয়ারে’ ব্যবহার করা যাবে না। র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি কিটের কম্বাইন্ড আইজিএম (ইমিউনোগ্লোবিন এম, যা ইনফেকশনের শুরুতে তৈরি হয়) এবং আইজিজি’র (ইমিউনোগ্লোবিন জি, ইনফেকশনের বিলম্বিত পর্যায়ে তৈরি হয়) ন্যূনতম সেনসিটিভিটি ৯০ শতাংশ ও স্পেসিফিসিটি ৯৫ শতাংশ হতে হবে।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সালাউদ্দিন বলেন, এখানে সেনসিটিভিটি বলতে বোঝানো হয়েছে, কভিড-১৯-এর লক্ষণ-উপসর্গ কমে যাওয়ার ১৪ দিন পর রক্তে পাওয়া অ্যান্টিবডির শতকরা হার।

এই নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়ে প্লাজমা থেরাপির জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এ খান বলেন, দেরিতে হলেও এটা ভালো উদ্যোগ। বাংলাদেশে এখন অনেক বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, কিন্তু অনেকেই টেস্ট করার সুযোগ পায়নি। যদি সার্ভেইলেন্স হিসেবে র‌্যাপিড কিটের মাধ্যমে অ্যান্টিবডি টেস্ট করা যায়, তাহলে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাবে। তাছাড়া রক্তে অ্যান্টিবডির মাত্রাও জানা যাবে।

কনভালসেন্ট প্লাজমা থেরাপির জন্য অ্যান্টিবডি পরীক্ষা জরুরি। এ কারণেও এই কিট প্রয়োজন বলে মনে করেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আশরাফুল হক।

তিনি বলেন, প্লাজমা দেওয়ার আগে জানতে হবে, দাতার প্লাজমায় প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, যে অ্যান্টিবডি আরেকজনের কাজে লাগবে। কারণ একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় না থাকলে ওই প্লাজমা আরেকজনকে দিয়ে লাভ নেই। ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী কভিড-১৯-আক্রান্ত অনেকের শরীরে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে না। সে ধরনের দাতার প্লাজমা নিয়ে কোনো লাভ হবে না।

তিনি বলেন, আরটিপিসিআর পরীক্ষার সময় নমুনায় ভাইরাস কপির সংখ্যা ২০০-এর নিচে হলে পিসিআর তা নির্ণয় করতে পারে না। অর্থাৎ সেরকম রোগীর টেস্টে সংক্রমণ ধরা পড়বে না। নাক ও গলা থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল আসবে, কিন্তু ফুসফুসে ভাইরাস থাকতে পারে দুইশ’র বেশি। সেক্ষেত্রে পরীক্ষায় নেগেটিভ এলেও ওই ব্যক্তি আসলে পজিটিভ। নির্দিষ্ট সময় পর কিন্তু শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে র‌্যাপিড কিটে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে কভিড-১৯-আক্রান্ত হয়েছিল কি না, সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে।

অধ্যাপক আশরাফুল হক বলেন, কভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের সময় নানা কারণে একটি আরেকটির সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগ থাকে। ফলে অনেকে নেগেটিভ হলেও ফল পজিটিভ আসতে পারে। ওই ব্যক্তি যখন প্লাজমা দিতে যাচ্ছেন, তখন হয়তো দেখা যাচ্ছে তিনি আক্রান্তই হননি।