ক্রেতা সংকটে বিপাকে বড় গরুর খামারি ও ব্যাপারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর পশুর হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু আসছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার হাটে গরুর উপস্থিতি কম। আবার হাটে যেসব গরু উঠেছে, তার মধ্যে বড় আকারের গরু নিয়ে আসা ব্যাপারী ও খামারিরা বেশ বিপাকে আছেন। কারণ কভিড-১৯ সংকটের কারণে এবার রাজধানীতে বড় গরুর চাহিদা নেই বললেই চলে। ছোট ও মাঝারি আকারের গরু ক্রয়ে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। আর এবার বিভিন্ন আবাসিক ভবনের নিচে গরু রাখার বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন বাড়ি মালিকরা। ফলে যারা কোরবানি করার জন্য মনস্থির করেছেন, তারা শেষ মুহূর্তে গরু কেনার চিন্তা করছেন। ফলে গরুর বাজারও শেষ সময়ে জমে উঠতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।

গরুর ব্যাপারীরা জানান, করোনা এবং বন্যার কারণে এবার গরুর উপযুক্ত ভালো দাম মিলছে না। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গরুর বেচাকেনায় বেশ সাড়া মিলছে। করোনা সংক্রমণ রোধে ই-কমার্স অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) সহায়তায় অনলাইনে কোরবানির পশু ক্রয়, কোরবানি, মাংস প্রক্রিয়াকরণ ও বাসায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছে সিটি করপোরেশন। অনলাইনে যাচাই-বাছাই করে গরু কিনছেন অনেকে। তবে অনলাইনেও বড় গরুর বিক্রি খুবই কম।

গতকাল রাজধানীর আফতাবনগর হাট ঘুরে দেখা যায়, সেখানে অন্তত তিন হাজার গরু উঠেছে। কাল থেকে মোটামুটি সম্ভাব্য ক্রেতারা হাটে আসা শুরু করেছেন। হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মাইকিং করা হলেও ব্যবসায়ী, ইজারাদার প্রতিনিধি বা ক্রেতারা তা কমই মানছেন। জামালপুরের গরু ব্যবসায়ী ইমরুল কায়েস জানান, তিনি হাটে তিনটি ষাঁড় এনেছেন। তিনি দেশীয় প্রজাতির প্রতিটি ষাঁড়ের দাম হাঁকছেন এক লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। তবে এ দামে কাল পর্যন্ত কেউ গরুগুলো কিনতে রাজি হননি।

আফতার নগর গরুর হাটের ইজারা কমিটির সদস্য কাউসার আলী শেয়ার বিজকে বলেন, প্রতি বছর আনুষ্ঠানিকভাবে হাট শুরুর আগেই অনেক গরু বিক্রি হয়। আর গরুও আসে প্রচুর। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী চিত্র। পর্যাপ্ত গরুও নেই, ক্রেতাও নেই। যদিও দুই একজন ক্রেতা আসছেন- তারাও মাঝারি ও ছোট গরুর প্রতি আগ্রহী। বড় গরুর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। দামও বলছেন বাজার দরের তুলনায় অর্ধেক। এতে আমরাও চিন্তিত হয়ে পড়েছি। ব্যাপারীরাও হতাশ। তবে আজকাল দুদিন কিছু গরু বিক্রি হতে পারে বলেও জানান তিনি।

ক্রেতাদের একজন ইমান আলী বলেন, আমার বাসা বনশ্রী। এ হাট থেকে গরু কেনার চিন্তা করছি। এ জন্য হাটের পরিস্থিতি বোঝার জন্য এসেছি।

মেরাদিয়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিক্রি তেমন নেই। সম্ভাব্য ক্রেতারা হাটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে চলে যাচ্ছেন। ধুপখোলা গরুর হাটে ছোট গরুর বিক্রি বেশি। ছাগলও বিক্রি হচ্ছে বেশ। ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি এবং বড় আকারের গরুর দরদাম করে চলে যাচ্ছেন ক্রেতারা। রাজধানীর সবচেয়ে বড় স্থায়ী পশুর হাট গাবতলী। এ হাটের নিয়মিত ব্যবসায়ীরা জানান, এবার পর্যাপ্ত গরু থাকলেও ক্রেতা খুবই কম।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু নিয়ে আসা ব্যাপারীরা বলছেন, ঈদের আর মাত্র দুদিন বাকি। এখনও যদি ক্রেতাদের মধ্যে কোরবানির পশু কেনার প্রবণতা না থাকে, তাহলে হয়তো কাক্সিক্ষত সংখ্যক গরু বিক্রি করতে পারবেন না তারা। ঈদের আর দু’দিন বাকি থাকলেও হাটে তেমন বেচাকেনা নেই। তবে অনেকেই হাটে আসছেন। দাম-দর করছেন, কিন্তু গরু কিনছেন না। যারাও আসছেন তাদের চাহিদা ছোট কিংবা মাঝারি সাইজের গরু। ফলে মাথায় হাত পড়েছে গরু ব্যবসায়ীদের। ন্যায্যমূল্যের চেয়ে কম দাম চেয়েও বিক্রি করতে পারছেন না গরু। শেষ মুহূর্তে কাক্সিক্ষত দামে বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়েও সংশয়ে আছেন। 

শনিরআখড়ার হাটে কিশোরগঞ্জ থেকে আসা ব্যাপারী আবদুস সহিদ বলেন, গত সোমবার পাঁচটি গরু নিয়ে হাটে এসেছি। কিন্তু এখনও বিক্রি করতে পারিনি একটাও। ক্রেতারা দাম জিজ্ঞেস করেই চলে যাচ্ছেন। এভাবেই চলছে। ক্রেতারা ভাবছেন দাম বেশি। কিন্তু আমরা তো খামারে লালন-পালনের খরচসহ যাবতীয় খরচ হিসাব করে সামান্য লাভ রেখে দাম নির্ধারণ করি। এমন যৌক্তিক দামেও ক্রেতা মিলছে না।

রাজধানীর গেণ্ডারিয়ার ধুপখোলা মাঠের হাটে ঝিনাইদহ থেকে বিক্রির জন্য গরু এনেছেন মো. জালাল হোসেন। প্রতি বছর হাটটিতে গরু নিয়ে আসেন তিনি। বিক্রি করেন সবকটি। তিনি জানান, ‘এবার পরিস্থিতি ভালো বোঝা যাচ্ছে না। কারণ চারদিকে করোনা। যে গরুর দাম এক লাখ টাকা, ক্রেতারা সেই গরুর দাম বলছেন ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এক লাখের কম বিক্রি হলে লোকসান হবে। কারণ গ্রামেই এ গরু ৯০ থেকে ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তার ওপর ঢাকায় নিয়ে আসার খরচ প্রায় পাঁচ হাজার টাকা।’ তবে তিনি আশাবাদী আজ বৃহস্পতি ও আগামীকাল শুক্রবার কাক্সিক্ষত দামে গরু বিক্রি করতে পারবেন। তিনি নিজেও স্বীকার করলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধুপখোলা হাটে গরু খুবই কম এসেছে।

হাট ইজারা কর্তৃপক্ষ জানায়, দুপুর পর্যন্ত তিনটি মাঝারি সাইজের গরু বিক্রি হয়েছে। এ বিক্রি একেবারেই নগণ্য। তাই স্বেচ্ছাসেবক থেকে শুরু করে হাট কমিটির সবাইকে অলস সময় পার করতে হচ্ছে।