ভালো দাম পেয়ে ক্ষতির পরিমাণ কমেছে পাটচাষিদের

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় চলতি বছর অতিবৃষ্টির কারণে প্রায় ৩০ হাজার একর জমির পাট নষ্ট হয়ে যায়। ফলে লোকসানের মুখে পড়েন এ অঞ্চলের পাটচাষিরা। তবে পাটের দাম ভালো পাওয়ায় সে ক্ষতি কিছুটা লাঘব হয়েছে পাটচাষিদের। বর্তমানে বাজারে মানভেদে প্রায় দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে। এতে অনেকটা খুশি জেলার পাটচাষিরা।

জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শকের কার্যালয়ের তথ্য মতে, চলতি বছর কুষ্টিয়ায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯৫ হাজার ৫১০ একর। তবে পাট চাষ হয়েছে ৯৪ হাজার ৬৯৮ একর। এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় চার লাখ ২৪ হাজার ৬৫৪ বেল। প্রতি বেলের ওজন ধরা হয় ১২৮ দশমিক ২৫ কেজি।

জানা গেছে, চলতি বছর কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ছয় হাজার ৭৯২ একর, কুমারখালী উপজেলায় ১২ হাজার ৩২৫ একর, খোকসা উপজেলায় ১০ হাজার ৬২১ একর, মিরপুর উপজেলায় ১৬ হাজার ৯২ একর, ভেড়ামারা উপজেলায় আট হাজার ৬০৭ একর এবং দৌলতপুর উপজেলায় ৪০ হাজার ৯৭৭ একর জমিতে পাট চাষ করা হয়। তবে অতিবৃষ্টির কারণে জেলায় প্রায় ৩০ হাজার একর জমির পাট নষ্ট হয়ে যায়।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার শেরপুর গ্রামের পাটচাষি ইয়াকুব হোসেন বলেন, ‘এ বছর চার বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছি। তবে বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে পানি জমে থাকায় অনেক পাট নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে পাটের ফলন কম হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে পাটের ক্ষতি হলেও এ বছর পাটের দাম ভালো পেয়েছি। প্রায় দুই হাজার ১০০ টাকা মণ দরে আগেই পাট বিক্রি করে দিয়েছি। এখন বিক্রি করলে আরও একটু বেশি দাম পেতাম।’

একই গ্রামের পাটচাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার তিন বিঘা জমিতে পাট বপন করেছিলাম। তবে অন্যান্য বারের চেয়ে ফলন অনেক কম হয়েছে। ক্ষেতের অনেক পাট নষ্ট হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে অর্ধেক জমির পাট দুই হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। আশা করি, বাকি অর্ধেক পাটের দাম ভালো পাব।’

উপজেলার বালিয়াশিশা বাজারের পাট ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, ‘গতবার এই সময় পাটের দাম ছিল দেড় হাজার টাকা মণ। আর এখন সেটি ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ। গতবারের চেয়ে এবার পাটের দাম প্রায় ৯০০ টাকা বেশি।’

পাটের মূল্য বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, জমিতে অনেক পাট নষ্ট হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ফলনও কম হয়েছে। যার কারণে পাট গতবারের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে কিনতে হচ্ছে। এখানে লালি, সাদা ও শ্যামলাÑএই তিন ধরনের পাট কেনা হয়। বর্তমান লালি পাট আড়াই হাজার টাকা মণ কেনা হচ্ছে। এ ছাড়া সাদা ও শ্যামলা পাট ২ হাজার ৪০০ টাকা মণ কেনা হচ্ছে।

কুষ্টিয়ার মুখ্য পাট পরিদর্শক মো. সোহরাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, এই সময়ে কোনো দিন পাটের এত দাম ছিল না। কৃষক এই সময় এত দামে পাট বিক্রি করতে পারেনি। কিন্তু এবার একবারে ব্যতিক্রম। এবার ভালো দামে পাট বিক্রি করতে পারছেন।

তিনি আরও বলেন, এবার অতি বৃষ্টির কারণে কুষ্টিয়ায় বপনকৃত প্রায় ৩০ হাজার একর ক্ষেতের পাট নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে পাটের ফলন অনেক কম হয়েছে। যেখানে প্রতি বছর চাষিরা বিঘাপ্রতি আট থেকে ১০ মণ পাট পেতেন। এবার সেখানে মাত্র পাঁচ থেকে ছয় মণ পাট পেয়েছেন।

তিনি জানান, এ বছর সরকারিভাবে পাট কেনা হচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজিএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় অবস্থিত পাটক্রয় কেন্দ্রে পাট কেনা হবে না। তবে বর্তমানে বাজারে পাটের দাম ভালো থাকায় চাষিদের পাট বিক্রি করতে সমস্যা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।