রুবাইয়াত রিক্তা: দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা প্রশংসনীয়। সবকিছু ভালোই চলছে। আন্তর্জাতিক খবর সাধারণত দেশের পুঁজিবাজারে তেমন প্রভাব ফেলে না। তাই তা আলোচনার বিষয় নয়। কিন্তু হঠাৎ করে পুঁজিবাজার কেন অস্থির হয়ে পড়লো? এ কারণ জানা নেই কারো। আর পতনের কারণ খুঁজে বের করছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। এদিকে টানা দরপতনে নাভিশ্বাস অবস্থা বাজারের। অনেক বিনিয়োগকারীর কাছেই অসহনীয় হয়ে পড়ছে বাজার। লাভ তো দূরের কথা, পুঁজিবাজার এখন লোকসানের বাজার হয়ে পড়ছে। প্রতিদিন ২-৫ শতাংশ হারে পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
দরপতনের প্রকৃত কারণ জানা না গেলেও বিনিয়োগকারীরা এপ্রিলের দরপতনের জন্য দুটি ব্যাংককে দায়ী করছেন। তাদের অভিযোগ একটি ব্যাংকের দায়িত্বহীন সিদ্ধান্তের কারণে বাজার অস্থির হয়ে পড়ে। পরে তার সঙ্গে যোগ দেয় আরেকটি ব্যাংক। গত দুই দুপ্তাহে একটি ব্যাংকের শেয়ারের দর কমেছে ২৮ শতাংশ। অন্যটির পড়েছে ১৮ শতাংশ। প্রতিদিনই প্রতিষ্ঠান দুটির শেয়ারের দর কমছে। এ দর সর্বশেষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়েও অনেকে শঙ্কিত। দেশের অন্যতম প্রধান বেসরকারি ব্যাংকের দরপতনের পর বাজার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এ পতন যদি আরও দীর্ঘ হয়। আর পতনের জন্য বিনিয়োগকারীরা ওই ব্যাংককে দায়ী করে, তা মোটেই অমূলক হবে না।
নানা কারণে ব্যাংকিং খাতের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। এর অন্যতম কারণ এ খাতে বিনিয়োগ করে তারা যত বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তা অন্য কোনো খাতে হয়নি। গত ছয় বছর ব্যাংকগুলো তার খেসারত দিয়েছে। অনেক ব্যাংকের দর ফেস ভ্যালুর নিচে নেমে গিয়েছিল। সম্প্রতি আবারও ব্যাংকের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিলো বিনিয়োগকারীরা।
তবে ব্যাংক ছাড়া শেয়ারবাজার উঠবে না বলে মনে করেন অনেক বিনিয়োগকারী। তাদের মতে, পুঁজিবাজারে বর্তমানে ডেট্রেডিং হচ্ছে। এ অবস্থায় এখন দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ প্রয়োজন। আর এখনও এ ধরনের বিনিয়োগের উপযুক্ত খাত ব্যাংক। ব্যাংক হচ্ছে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে কমপ্লায়েন্ট খাত। এ খাত নিবিড়ভাবে মনিটরিং করার জন্য রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ। প্রতিটি ব্যাংকে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ। এরপরও নামিদামি সিএ ফার্ম দিয়ে প্রতিবছর অডিট করানো হয়। ব্যাংকে চুরি হলে, ঋণখেলাপি হলে মুনাফা থেকে তা প্রভিশন রাখতে হয়। তাই গ্রাহক স্বার্থ অনেকটা সুরক্ষিত। তারপরও ব্যাংকগুলো প্রতিবছর নিয়মিত ভালো মানের ডিভিডেন্ড দিচ্ছে। তাই সব বিবেচনায় ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘমেয়াদে পুঁজি সুরক্ষিত। কিন্তু ব্যাংকিং খাত সঠিক আচরণ করছে না। এ খাতের কারণে বাজারে চলছে এক অস্বস্তিকর অবস্থা।
দেশের পুঁজিবাজারে ভালো খবরের চেয়ে মন্দ খবর বেশি। দরবৃদ্ধির চেয়ে পতন বেশি। লাভের চেয়ে লোকসান বেশি। বাজার নিয়ে গত কয়েক মাস অনেক ইতিবাচক কথা বলা হলেও এখন আর সে ধারায় নেই। সূচক বাড়লেও বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী লোকসানে। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে যারা বাজারে এসেছেন, তাদের অবস্থা শোচনীয়। ১৫-২৫ শতাংশ পুঁজি হারিয়ে বসে আছেন অনেকে। এপ্রিলের মন্দা সহ্য করা কষ্ট হয়ে পড়েছে অনেকের পক্ষে।
গতকাল বাজার পতন দিয়ে শুরু আর পতন দিয়েই শেষ হয়েছে। কিন্তু কি কারণে হচ্ছে পতন, তা কেউ বলছে না। গতকাল একদিনে সূচক পড়েছে ৫৬ পয়েন্ট। সূচক পড়লেও লেনদেন বেড়েছে আগের কার্যদিবসের চেয়ে বেশি। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে অনেক শেয়ার সেল দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় লেনদেন বেড়েছে।