সড়ক ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল পদ্ধতির প্রবর্তন ঘটুক

বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তার সীমাবদ্ধতা এবং সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে করণীয় বিষয় সবার জানা। সড়ক ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে দুর্ঘটনা কমবে। অথচ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমানো যাচ্ছে না। জনসচেতনতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে দুর্ঘটনা রোধে এটি একমাত্র বিষয় নয়।

গতকাল শেয়ার বিজের প্রথম পাতায় দুর্ঘটনাকবলিত একটি মাইক্রোবাসের ছবি ছাপা হয়। তাতে বলা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মীরসরাই উপজেলার সোনাপাহাড় এলাকায় উল্টো দিক থেকে আসা লরি ধাক্কা দেয় মাইক্রোবাসটিকে। এতে সঙ্গীতাঙ্গনের দুই যন্ত্রশিল্পী নিহত হন।

সড়ক দুর্ঘটনা শুধু মৃত্যুই ডেকে আনে না, বেঁচে যাওয়া লোকজন পঙ্গুত্ব বরণ করেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বিকলাঙ্গ হয়ে পড়লে পুরো পরিবারকে দুঃসহ ভোগান্তির শিকার হতে হয়। দুর্ঘটনা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু তা কমিয়ে সড়ক ব্যবস্থাপনা, আইন পরিপালন নিশ্চিত করা গেলে তা কমে আসবে। মাত্রাতিরিক্ত ধীরগতির যান গণপরিবহনের নির্দিষ্ট গতিতে চলার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। কোথায় কোন গতিতে গাড়ি চলবে, তা নির্ধারণ করে দিতে হবে।

উন্নত বিশ্বে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিতে গণপরিবহন চালু থাকায় সুশাসন নিশ্চিত হয়েছে। সেসব দেশে আইন লঙ্ঘনের পরপরই ওই গাড়িচালককে পাকড়াও করে ট্রাফিক পুলিশ। সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নতি করতে হলে আইন অমান্যকারী যান ও চালককে তাৎক্ষণিক আইনের আওতায় আনতে হবে। সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় গণপরিবহনের জন্য নির্দিষ্ট লেনে চলাচল ঠিক করে দেয়া যেতে পারে। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা থাকলে আইন লঙ্ঘনকারী চালক ও যান সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব। গাড়ি উল্টো দিক থেকে এসে ধাক্কা দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাল, নাকি পথচারীকে বাঁচাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়; তা নির্ণয় করা গেলে প্রকৃত দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যায়।

ফিটনেসবিহীন গাড়ি যাতে চলাচল করতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজন বোধে গাড়ির দৃশ্যমান স্থানে ‘মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ’ লেখার বিধান করলে সুফল পাওয়া যাবে। ডিজিটাল ব্যবস্থার কথা বললেও আমাদের যোগাযোগব্যবস্থা ডিজিটাইজড করা যায়নি। সড়কে সড়কবাতি নেই বললেই চলে। আইন মেনে চলায় বাধ্যও করতে হবে, উদ্বুদ্ধও করতে হবে।

গাড়িচালকদের প্রাতিষ্ঠানিক ও ন্যূনতম কারিগরি শিক্ষা নেই। অনেকে সহকারী হেলপার থেকে চালক হয়, যে সহকারী মূলত ভাড়া আদায় করে। ঘুষ দিয়ে লাইসেন্সপ্রাপ্তির প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। উন্নত বিশ্বে আইন লঙ্ঘনের দায়ে পয়েন্ট কাটা হয়। নিয়ম লঙ্ঘন করতে করতে একসময় পয়েন্ট শূন্যের কোটায় নেমে আসে। তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে লাইসেন্স স্থগিত হয়ে যায়।

কর্তৃপক্ষ, চালক, পথচারীসহ সব নাগরিককেই দায়িত্বশীল হতে হবে। সড়ক নিরাপত্তায় উন্নতি করা দেশগুলো স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করেই সফল হয়েছে, কমিয়ে এনেছে দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতি। সরকারের কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা থাকলে স্বার্থের সংঘাত দেখা যায়। তখন আইনের প্রয়োগ কঠিন হয়। তাই সর্বোচ্চ রাজনৈতিক মহল থেকে এ ব্যাপারে অঙ্গীকার প্রয়োজন।