শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আজকের বাংলাদেশ সারাবিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। অনেকে অনেক সময় জিজ্ঞেস করেন, ম্যাজিকটা কী? আমি বলি, ম্যাজিক কিছুই না, ম্যাজিকটা হচ্ছে দেশপ্রেম। দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ, দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ। মানুষকে নিজের করে চিন্তা করা।’
গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ‘বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল’-এর উদ্বোধন ও এই তহবিল থেকে ‘পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং’ স্কিমে অর্থায়নের লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় ঋণচুক্তি স্বাক্ষরকালে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সূত্র: বিডি নিউজ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে উন্নয়নটা তখনই হবে, দেশটাকে যদি কেউ চিনতে পারে, জানতে পারে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে পারে এবং উন্নতি যে অপরিহার্য দেশটার জন্য, সেটা যদি কারও চিন্তা-চেতনায় থাকে, তখনই সেদেশের উন্নতি সম্ভব।’ কোনো দেশের ক্ষমতায় খুনিরা থাকলে সেই দেশের উন্নতি কখনও সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সম্পদ সীমিত, ভৌগোলিক সীমারেখার তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। এদেশে ধারাবাহিক গণতন্ত্র চলেনি, মিলিটারি ডিক্টেটররা বিভিন্ন সময় কখনও দৃশ্যমান হয়ে আবার কখনও অদৃশ্যভাবে এই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। ক্ষমতা যুদ্ধাপরাধী আর খুনিদের হাতে থাকলে সেই দেশের কখনও উন্নতি হওয়া সম্ভব নয়।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘কেউ শুধু হয়তো কারও সন্তানকে দুই পায়ে দাঁড় করানোর চিন্তা করবে। আর আমার চিন্তা আমার বাবার কাছ থেকে যেটা শিখেছি, দেশের মানুষকে দুই পায়ে দাঁড় করিয়ে তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা। সেটাই হচ্ছে আমার একমাত্র লক্ষ্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই দেশের স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি। এই স্বাধীনতাকে সুসংহত করা আর স্বাধীনতার সুফলটা যেন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের হাতে পৌঁছায়, সেজন্য অর্থনৈতিকভাবে আমরা স্বাবলম্বী হবো, কারও কাছে হাত পেতে চলব না। নিজের পায়ে চলব। আর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে তো এটা আরও বেশি বড় কর্তব্য আমাদের সামনে, বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে, সেটাও আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। যদি সেটা আমরা করতে চাই, নিজের দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি করে, বাজার সম্প্রসারণ করে, আমাদের দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করে আমরা বিদেশেও পাঠাব।’
‘বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল’ গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু এর মাঝেও দেশকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই এই তহবিল গঠন।’
গ্লোবাল ভিলেজে এককভাবে কেউ চলতে পারে না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের পোর্ট… চট্টগ্রাম পোর্ট, মোংলা পোর্ট, এখন পায়রা পোর্ট, আবার মাতারবাড়ীতেও অর্থাৎ মহেশখালি সেটাতেও একটা নতুন পোর্ট আমাদের তৈরি হচ্ছে। আমরা শুধু নিজে ব্যবহার করব না। এরই মধ্যে ভারত, নেপাল, ভুটান তাদেরও আমরা কিন্তু সুযোগ দিয়েছি।’
রাবনাবাদ চ্যানেল শুধু ড্রেজিং নয়, রক্ষণাবেক্ষণেরও নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এভাবে আমাদের দক্ষিণের নদীগুলো শত শত বছরে সিলড মুখগুলো যে বন্ধ করে রেখেছে, সেটা যদি আমরা খুলে দিতে পারি আমাদের নদীর নাব্য বৃদ্ধি পাবে। নদীপথে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সুগম হবে। শুধু তাই নয়, এখান থেকে সেই ভারতের আসাম থেকে বা ভুটান থেকে নৌপথেই পণ্য পরিবহন করার সুযোগ হবে এবং তারা আমাদের পোর্টগুলোও ব্যবহার করতে পারবে। এর ফলে আমাদের অর্থনীতি আরও মজবুত হবে।’
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি মোংলা পোর্ট যখন চালু হয়েছে সঙ্গে সঙ্গে এই দুটো হলে আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারবে। কাজেই আমি মনে করি, এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এবং সত্যি কথা বলতে, পায়রা পোর্ট যখন প্রথম করি তখন অনেকের কাছে শুনেছি এটা চলবে না, এটা কীভাবে হবে, এটা কাজে লাগবে না প্রভৃতি নানা কথা। তবে এটা ঠিক, অনেক কিছু শুনতে হতে পারে, ওগুলো নিয়ে আমি চিন্তা করি না।’
দেশের উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পরিকল্পনার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল’-এর উদ্বোধন করার পর তার মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশে একটি নবযুগের সূচনা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বিআইডিএফ থেকে অর্থায়নের জন্য প্রথম অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে পায়রা বন্দরে রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং স্কিমটি গ্রহণ করেন। এই প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়ে অনুষ্ঠানে অর্থ বিভাগ, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ বিভাগের সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।