নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম বলেছেন, ‘জ্বালানি সাশ্রয়ে ছোট-বড় সব ধরনের শিল্পকারখানায় যেতে হবে। এজন্য এনার্জি অডিট করতে হবে। সরকারকে শিল্পমালিকদের সঙ্গে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’
গতকাল এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিন আয়োজিত ‘এনার্জি ইফিসিয়েন্সি অপরচুনিটি ইন আরএমজি অ্যান্ড টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘শিল্পে জিরো ওয়েস্ট সিস্টেম আমাদের শিখতে হবে। আমাদের মতো ঘনবসতির দেশে এই ধরনের আইডিয়া কাজে লাগানো দরকার। নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে আসা প্রয়োজন। জ্বালানি সাশ্রয়ে আমরা এমনভাবে এগিয়ে যেতে চাই, যাতে করে পৃথিবীর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘যারা অডিট করবে, যার ফাইন্যান্স করবে, যারা ফাইন্যান্স নেবে, তাদের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।’
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘এসব খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো নিজেরা তেমন উৎসাহিত হয় না। তাদের অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেয়া, ব্যবসায়ীদের কাছে যাওয়া এবং বোঝানো প্রয়োজন। সবাই মিলে কাজ করতে হবে। একটা নীতিমালা করা, ট্রেনিং দেয়া এগুলোও কাজ। তবে মূল কাজ বাস্তবায়ন করা।’
ওয়েবিনারে স্রেডার সদস্য ফারজানা মমতাজ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট সেক্টরে জ্বালানি সাশ্রয় করা গেলে মোট সাশ্রয় ১৭ দশমিক ছয় ভাগে নেমে আসবে। সরকার ২০১৬ সালে জ্বালানিসাশ্রয়ী পরিকল্পনা করেছে। এজন্য অনেক নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে। এনার্জি অডিট প্রোগ্রাম দ্রুত শুরু করা দরকার। যেসব শিল্পকারখানায় জ্বালানির ব্যবহার বেশি, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে স্রেডা কথা বলে জ্বালানি সাশ্রয়ের বিষয়ে কথা বলবে। জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষকে সচেতন করার জন্য ক্যাম্পেইন করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘শিল্পে জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য আলাদা অর্থের প্রয়োজন। যাতে শিল্পমালিকরা আগ্রহী হয়, সেজন্য আলাদা লোনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যাতে তারা জ্বালানিসাশ্রয়ী যন্ত্রাংশ ব্যবহার করতে আগ্রহী হয়। সেটা আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। জ্বালানি সাশ্রয়ে মনিটরিং ডেটা তৈরি করছি আমরা।’
ওয়েবিনারে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি সফলতা, কেসস্টাডি ও পরামর্শ নিয়ে বই আকারে শিল্পমালিকদের দেয়া দরকার। এতে আগ্রহ বাড়তে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রিন ফাইনেন্সিংয়ের বিষয়ে জানা দরকার। এতদিন ধরে কাকে দিয়েছে, কোনো মনিটরিং করা হয়নি; মনিটরিং দরকার, তাতে হয়তো বিনিয়োগ বাড়বে।’
অন্যদিকে বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট রুবানা হক বলেন, ‘শিল্পে জ্বালানি সাশ্রয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছি। এ বিষয়ে স্রেডার সঙ্গে এক হয়ে কাজ করতে যাচ্ছি আমরা। খুব শিগগিরই তাদের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করবে বিজিএমইএ।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিল্পে জ্বালানি সাশ্রয়ে বিনিয়োগ বড় বিষয়। গ্রিন ফাইন্যান্সিংয়ের বিষয়টি আরও ভালোভাবে আসা দরকার। সাশ্রয়ের নতুন নতুন যন্ত্রাংশ আসছে, সেটিও আমাদের দেখতে হবে। ছোট কারখানাগুলো নিজেরা যাতে উদ্যোগী হয়, সে বিষয়ে কাজ করতে হবে। এজন্য উৎসাহ দিতে বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কার দেয়া যেতে পারে। সবুজ বিপ্লব শুধু শহরে নয়, সারাদেশেই হওয়া দরকার।’
বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে শফিকুল আলম আরেকটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেখানে তিনি গার্মেন্টের জ্বালানি সাশ্রয়ের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি সাশ্রয়ে বিজিএমইএ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বিজিএমইএ রুফটপ সোলারকে গুরুত্ব দিচ্ছে। গার্মেন্টে যদি রুফটপ সোলার বসানো যায়, তাহলে এটি জ্বালানি সাশ্রয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।’
বিজিএমইএ’র পরিচালক আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘বিশেষায়িত শিল্প এলাকায় বিল্ডিংগুলোর ছাদ অনেক বড়। সেখানে রুফটপ সোলারে যাওয়া যাবে। এখানে যে ঋণ দেয়া হয়, সেটা যদি আরও আকর্ষণীয় করা যায় তাহলে এটি বাড়বে। জ্বালানি সাশ্রয়ে কেন যেতে হবে, সেটা জানানো প্রয়োজন। প্রাকৃতিক গ্যাস কমছে। তাই আমাদের সাশ্রয় করতেই হবে। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে জোর দিতে হবে। সেক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে।’
ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. মো. জহুরুল হক, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফি ও ইডকলের চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার নাজমুল হক।