আট মাসে রাজস্ব ঘাটতি সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস রাজস্ব আহরণ করেছিল প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর কাস্টম হাউসটিতে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু ইতোমধ্যে অর্থবছরের দুই তৃতীয়াংশ সময় শেষ হলেও কাক্সিক্ষত রাজস্ব আহরণ করতে পারেনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ হয়েছে; যা এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা কম।

২০২০-২১ অর্থবছরের রাজস্ব আহরণের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, করোনাকালে শুরু হওয়া অর্থবছরের যাত্রা হয় সাড়ে ১১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি নিয়ে। তবে করোনাকালেও আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক থাকায় অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস থেকে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। জুলাইয়ে ১১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হলেও আগস্টে ইতিবাচক ধারায় ফিরে রাজস্ব আহরণ। এরপর আর কোনো মাসে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়নি। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাস শেষে গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার ছিল তিন শতাংশ বেশি। অর্থাৎ বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তবে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক না হলেও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

চলতি অর্থবছরের মাসভিত্তিক রাজস্ব আহরণের চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই মাসে চার হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয় তিন হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। আগস্ট মাসে পাঁচ হাজার ২০৭ কোটি টাকার বিপরীতে আহরণ হয় তিন হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে চার হাজার ৩৭৩ কোটি টাকার বিপরীতে আহরণ হয় তিন হাজার ৮১৬ কোটি টাকা, অক্টোবরে পাঁচ হাজার ২৮১ কোটি টাকার বিপরীতে আহরণ হয় তিন হাজার ৮৭১ কোটি টাকা, নভেম্বরে পাঁচ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা লক্ষ্যের বিপরীতে আহরণ হয় তিন হাজার ৭৭০ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে পাঁচ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার বিপরীতে আহরণ হয় তিন হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা, জানুয়ারিতে পাঁচ হাজার ৬০৮ কোটি টাকার বিপরীতে আহরণ হয় চার হাজার ৮০ কোটি টাকা। আর সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে চার হাজার ৮৫৭ কোটি টাকার বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি আহরণ করে চার হাজার ২১০ কোটি টাকা। অর্থবছরের এই আট মাসে মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ২৯ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। 

গত অর্থবছরে কাস্টম হাউসটির সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে কভিড-১৯-এর প্রভাবে বিশ্বজুড়ে আমাদানি-রপ্তানি সøথ হয়ে যায়। তবে বাংলাদেশে প্রথম দিকে এর কোনো প্রভাব না পড়লেও অর্থবছরের শেষ চার মাস ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে রাজস্ব আদায়। ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছর থেকে কম রাজস্ব আদায় করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয় ৪১ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা; যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৪৩ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা।

রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে থাকার বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফখরুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, করোনাভাইরাসের একটা প্রভাব তো আছেই। তবে এখন আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলছে। কিন্তু রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার পেছনে অন্য কারণ রয়েছে। কিছু উচ্চ শুল্কের পণ্য আগের তুলনায় কম আমদানি হচ্ছে। আর যেসব পণ্যের আমদানি বেড়েছে সেগুলোর শুল্ক কম। এছাড়া অনেক অসৎ আমদানিকার এখানে সুবিধা না পাওয়ায় অন্য কাস্টমস দিয়ে পণ্য খালাস করছে। এতে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কিছুটা কম হয়েছে বলে মনে করছি।