আর্মেনীয় হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ স্বীকৃতি দিল যুক্তরাষ্ট্র

শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোমান সাম্রাজ্যের তুর্কিদের হাতে আর্মেনীয় জনগোষ্ঠীর নির্বিচারে প্রাণ হারানোর ঘটনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে শনিবার এক বিবৃতিেিত বাইডেন এ স্বীকৃতি দিলেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তকে ‘পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান’ করেছে তুরস্ক। খবর বিবিসি, গার্ডিয়ান।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোওগলু এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসের বিষয়ে কারও কাছ থেকে শিখব না আমরা।’ এছাড়া তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আঙ্কারা ‘তীব্র প্রতিক্রিয়া’ জানাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছে।

বিবৃতিতে বাইডেন বলেছেন, অটোমান সাম্রাজ্যের শাসনামলে আর্মেনীয় গণহত্যায় নিহত সবাইকে আমরা স্মরণ করছি এবং এ ধরনের বর্বরতার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করতে আমরা আবারও অঙ্গীকার করছি।

তিনি আরও বলেন, এটা আমরা মনে রাখব, কারণ এ ধরনের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যেন আমরা সব সময় সতর্ক থাকতে পারি। তার দাবি, এটা কাউকে দোষারোপ করার জন্য বলা হচ্ছে না, বরং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন আর কখনও না ঘটে, তা নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য।

এর আগে এই হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে ২০১৯ সালে ভোটাভুটিতে অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ। জো বাইডেন সে সময় ভোটের এ ফলকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।

জানা যায়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে সাম্প্রতিক ফোনালাপে আর্মেনীয় গণহত্যার প্রসঙ্গটি সামনে আনেন জো বাইডেন। গত জানুয়ারিতে বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করার পর এ প্রথম দুই নেতা কথা বললেন।

১৯১৫ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত অটোমান সাম্রাজ্যে প্রায় ১৫ লাখ আর্মেনীয় প্রাণ হারান। ১৯১৫ সালের ২৪ এপ্রিল অটোমান সরকারের শত্রু বলে সন্দেহে আর্মেনীয় সম্প্রদায়ের কয়েকশ নেতা ও বুদ্ধিজীবীকে কনস্টান্টিনোপলে (ইস্তাম্বুল) বন্দি করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাদের বেশিরভাগকেই হত্যা ও নির্বাসিত করা হয়।

আর্মেনীয়রা ২৪ এপ্রিলকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। দীর্ঘদিন থেকে ওই হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা বলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য চাপ দিয়ে আসছে তারা।

জো বাইডেন সিনেটর থাকাকালে আর্মেনীয়-মার্কিন ও গ্রিক-মার্কিন সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়েছিলেন। এছাড়া তিনি তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় আর্মেনীয় গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।

তবে তুরস্ক বরাবরই বলে আসছে, তৎকালীন অটোমান সাম্রাজ্যে যে আর্মেনীয়দের জাতিগত হত্যা ও বহিষ্কার করা হয়েছিল, তা গণহত্যা নয়, বরং তা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপক সংঘাতের ফল।