শেয়ার বিজ ডেস্ক: মিয়ানমার সংকট নিরসনে ঐকমত্যে পৌঁছানোর দাবি করেছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের নেতারা। গতকাল তারা জানিয়েছেন, জোটের সংঘাতপূর্ণ এই দেশটিতে সহিংসতার অবসানে শনিবার দেশটির জান্তা সরকারের প্রধানের সঙ্গে একটি পরিকল্পনার বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন। এদিকে সংকট নিরসনে জান্তাপ্রধান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর নেতাদের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে তাতে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও বেসামরিক নাগরিক হত্যায় সেনাবাহিনীকে জবাবদিহি করার প্রসঙ্গগুলো স্থান না পাওয়ায় এর কড়া সমালোচনা করছে মিয়ানমারের জনগণ। খবর: বিবিসি, রয়টার্স।
আসিয়ান সম্মেলন থেকে বের হয়ে এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন। তিনি বলেন, এটি আমাদের প্রত্যাশার বাইরে। তিনি জানান, তারা বর্মি সেনাপ্রধান ও দেশটির জান্তা সরকারের প্রধানকে খুব বেশি অভিযুক্ত না করার চেষ্টা করেছেন। কেননা, কার জন্য সহিংসতা ঘটছে তার চেয়ে সংঘাত থামানোই বেশি জরুরি। ফলে সম্মেলনে সহিংসতার অবসানের দিকেই জোর দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত; এ ব্যাপারে বর্মি সেনাপ্রধানও একমত হয়েছেন।
সম্মেলনে আসিয়ান নেতারা মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে মিন অং হ্লাইংয়ের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি চেয়েছেন। একইসঙ্গে তারা রাজনৈতিক বন্দিদেরও মুক্তি চেয়েছেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, আসিয়ান নেতাদের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেননি মিন অং হ্লাইং।
সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি হিসিয়েন লুং সাংবাদিকদের বলেন, ‘ (মিন অং হ্লাইং) তিনি আমাদের কথা শুনেছেন। যেটি তার কাছে উপকারী মনে হবে, সেটি তিনি গ্রহণ করবেন। জান্তাপ্রধান দেশটির বিদ্যমান সংকটে আসিয়ানের একটি গঠনমূলক ভূমিকা রাখা বা প্রতিনিধি দল পাঠানো কিংবা মানবিক সহায়তার বিরোধিতা করেননি বলেও জানান সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে সহিংসতায় জর্জরিত মিয়ানমারের সংকট নিরসনে জান্তাপ্রধান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর নেতাদের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে তাতে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও বেসামরিক নাগরিক হত্যায় সেনাবাহিনীকে জবাবদিহি করার প্রসঙ্গগুলো স্থান না পাওয়ায় এর কড়া সমালোচনা করছে মিয়ানমারের জনগণ। শনিবার ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় মিয়ানমারের জ্যেষ্ঠ জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে সঙ্গে নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) বৈঠকে মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধে ঐকমত্য হলেও কীভাবে তা অর্জিত হবে তার কোনো রোডম্যাপ দেয়া হয়নি।
মিয়ানমারের অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসিয়ানের বৈঠকে হওয়া সমঝোতার সমালোচনা করলেও গতকাল রোববার দেশটির বড় শহরগুলোতে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি।
মওচি তুন নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী বলেছেন, আসিয়ানের বিবৃতি নির্যাতিত, হত্যাকাণ্ডের শিকার ও সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডে সন্ত্রস্ত জনগণের মুখে চপেটাঘাত। এমন মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে আপনাদের সহযোগিতার দরকার নেই আমাদের।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০ দেশের জোট আসিয়ানের বর্তমান চেয়ার ব্রুনেই এক বিবৃতিতে শনিবারের বৈঠকে পাঁচটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলে জানায়। এগুলো হলোÑসহিংসতা বন্ধ, সব পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা, আলোচনার মধ্যস্থতায় আসিয়ানের পক্ষ থেকে বিশেষ দূত মনোনয়ন, সহায়তা নেয়া ও বিশেষ দূতের মিয়ানমার সফর।
এ পাঁচ বিষয়ের মধ্যে বন্দি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রসঙ্গটি স্থান না পেলেও বৈঠক তাদের মুক্তির ‘ডাক শুনেছে’ বলেও আসিয়ান চেয়ারম্যানের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও আইন অমান্যের যে আন্দোলন শুরু হয় তা দমনে নিরাপত্তা বাহিনী এখন পর্যন্ত ৭৪৮ জনকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি)। বিক্ষোভ দমনে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি লোককে আটক করেছে বলেও জানিয়েছে তারা।
জাকার্তার বৈঠকে মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া ও ব্রুনাইয়ের শীর্ষ নেতারা ছিলেন। লাওস, থাইল্যান্ড ও ফিলিপিন্স থেকে ছিলেন দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।