‘বাংলাদেশ ৯৯ নম্বরে উঠে আসবে, এটা বিশ্বাস করি না’

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজ করার সূচকে এ বছর বাংলাদেশের অবস্থান ৯৯ নম্বরে উঠে আসবে, এটা বিশ্বাস করেন না বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের সূচকে এখনই বাংলাদেশ ৯৯ নম্বরে উঠে আসবে, বিষয়টি এত সহজ নয়। এটি আর এখন বিশ্বাস করি না। কারণ ব্যবসা পরিস্থিতির উন্নতির কথা যতক্ষণ ব্যবসায়ীরা না বলবেন, ততক্ষণ বিশ্বব্যাংক পয়েন্ট দেবে না। আবার ব্যবসায়ীরাও বিশ্বব্যাংকের উপসূচকগুলো সম্পর্কে তেমন একটা সচেতন নন। তিনি বলেন, বিডা তিন-চার বছর ধরে বিশ্বব্যাংকের সূচক ধরে সংস্কার করছে।

গতকাল ব্যবসা সহজ করার সূচক নিয়ে এক ওয়েবিনারে সিরাজুল ইসলাম এ কথা বলেন। ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজ করার সূচকে বাংলাদেশ দুই অঙ্কের ঘরে (৯৯ নম্বর) নামানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়। সর্বশেষ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৮তম। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই) যৌথভাবে এ ওয়েবিনার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের কাছে সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মকর্তার অনৈতিকভাবে টাকা চাওয়ার বিষয়টিও স্বীকার করেন সিরাজুল ইসলাম। তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘কিছুদিন আগে একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী আমার কাছে অভিযোগ করেন যে তার কাছে অনৈতিকভাবে অর্থ চেয়ে নাজেহাল করা হয়েছে। অনৈতিক অর্থ না দেয়ায় যা করযোগ্য নয়, তাও কর দাবি করা হয়েছে। ওই বিদেশি বিনিয়োগকারী বিডার কাছে সমাধান চেয়েছেন। এ ধরনের অনৈতিক লেনদেনের বিষয় আছে, যা ব্যবসা সহজ করার ক্ষেত্রে বাধা।’

অনুষ্ঠানের কয়েকজন ব্যবসায়ী এ ধরনের অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ করলে বিডার চেয়ারম্যান তা স্বীকার করে নেন। ওই অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী ও সাবেক আমলাসহ নানা পেশাজীবী শ্রেণির প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। বিডার পরিচালক জীবনকে সাহা রায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেখানে বিডা গত কয়েক বছরে কী ধরনের সংস্কার করেছে, তা তুলে ধরা হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, মাঠপর্যায়ে এক জমি নামজারি করতে ৭২ হাজার টাকা লাগে। কেন চাওয়া হয়, এর কোনো উত্তর নেই। আরজেএসসিতে নিবন্ধন নিতে গেলে সরাসরি কাজ হয় না। সেখানে গেলে বলা হয়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আসতে হবে। এভাবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের চক্র গড়ে উঠেছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ন কবির বলেন, ‘কোনো অফিসে ফাইল আটকে থাকলে কাউকে বললেও বিপদে পড়বেন। আপনাকে বলবে, ফাইল তো পাওয়া যাচ্ছে না।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) সভাপতি হুমায়ন রশিদ বলেন, এমন খাতও আছে, যেখানে ব্যবসা শুরু করতে ২৮টি লাইসেন্স লাগে। প্রতিটি লাইসেন্সের আবেদন যদি নির্দিষ্ট কার্যালয়ে এক মাস পড়ে থাকে, তাহলে ২৮ মাস লাগবে। এমন পরিস্থিতিতে কে ব্যবসা করতে আসবে?

সরকারি উন্নয়ন সংস্থা ঠেঙ্গামারা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বলেন, নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা মনে করে, তাদের কাজ নিয়ন্ত্রণ করা। তারা ব্যবসা সহজ করায় মনোযোগ দেয় না। ব্যবসা করতে মাঠপর্যায়ে কী সমস্যা হয়, তা নিয়ন্ত্রণকারীরা শোনেন না।