সিনোফার্মের টিকা কেনা হবে সরাসরি

নিজস্ব প্রতিবেদক: চীনের সিনোফার্মের তৈরি কভিড-১৯ টিকা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) কেনা হবে। এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। করোনা সংক্রমণ রোধে জরুরি বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

গতকাল অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠকে করোনাভাইরাসের টিকা কেনা ছাড়াও কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এতে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবগুলোর নানা দিক সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার। তিনি জানান, বৈঠকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ চীন থেকে করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহের একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে। এটি হচ্ছে জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণ ও করোনা সংক্রমণ রোধে জরুরি বিবেচনায় চীনের তৈরি সার্স-কোভ-টু টিকা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার প্রস্তাব। প্রস্তাবটির নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, এটা সিনোফার্মের টিকা কেনার একটি প্রস্তাব। এখানে কী পরিমাণ, কত দিনের মধ্যে আনা হবে এসব কিছু বলা হয়নি। শুধু চীনের সিনোফার্ম থেকে সার্স-কোভ-টু ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রস্তাব ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর স্বীকৃতি দিয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ চীন থেকে টিকা সংগ্রহ করার অনুমোদন দিয়েছে। কী পরিমাণ সংগ্রহ করা হবে ও কত টাকা লাগবে, সেটা জানা যাবে যখন এ-সংক্রান্ত ক্রয় প্রস্তাব কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।

জানা গেছে, অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য দুটি এবং জরুরি প্রয়োজনে টেবিলে একটি প্রস্তাবসহ মোট তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে তিনটি প্রস্তাবেরই নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।

ওই বৈঠকে কভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীর ব্যবহারের জন্য ৪০টি অক্সিজেন জেনারেটর কিনছে সরকার। এটিও সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। অর্থাৎ অক্সিজেন জেনারেটর ক্রয়েও টেন্ডার পদ্ধতিতে যাচ্ছে না সরকার।

নানা ইস্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে দুর্নীতির প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছেÑসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য খাত অত্যন্ত জরুরি বিষয়। তাদের দায়িত্ব ছিল এসব চাহিদার বিষয়ে যথাযথ সময় ব্যবস্থা নেয়া, কিন্তু তখন সেটি করা হয়নি। করোনা পৃথিবীতে সবার জন্যই প্রথম, তাই সবাই যে সব কাজ সম্পর্কে অবগত থাকবে, তাও না। যদি বারবার একই রকম মিসটেক হয়, তাহলে এগুলো ইকোনমিক অ্যাফেয়ারস থেকে বাদ যাবে। তবে এখন যেগুলো আসছে, সেগুলো সবই নতুন।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, করোনা সারাবিশ্বে তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে। এর মাঝে কাজের পরিধি বাড়ছে। আমাদের এখন এগুলো চিন্তা না করে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে হবে। এ বিবেচনায় আমরা আজকে এটি অনুমোদন দিয়েছি। আমি একমত, আরও আগে যথাযথভাবে যদি আমরা এগুলো করতে পারতাম তাহলে হয়তো আমাদের সাশ্রয় হতো। তারপরও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সবাইকে বলেছি, সাশ্রয়ী হতে হবে।

বড় আকারের ব্যয়বহুল অক্সিজেন প্লান্টের বিকল্প হিসেবে ৪০টি অক্সিজেন জেনারেটর কেনা হচ্ছে। কাস্টমস শুল্কাদি, ভ্যাট, আয়কর, অভ্যন্তরীণ পরিবহন, এয়ারফ্রেইট চার্জসহ ৯২ কোটি ছয় লাখ ২৮ হাজার ৩৭০ টাকার প্রয়োজন হবে।

বরিশালে ৩৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি চালের সাইলো নির্মাণকাজের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। খাদ্য মন্ত্রণায়ের অধীন খাদ্য অধিদপ্তরের ‘মডার্ন ফুড স্টোরেজ ফ্যাসিলিটিজ (এমএফএসপি)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং ডব্লিউ-২১-এর আওতায় বরিশালে একটি স্টিল সাইলো নির্মাণকাজের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

প্রকল্পটি যৌথভাবে কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও দি জিএসআই গ্রুপ এলএলসি, ইউএসএ বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ৩৩০ কোটি ৮৬ লাখ ১৫ হাজার ৮২২ টাকা।

খাদ্য মন্ত্রণায়ের অধীন খাদ্য অধিদপ্তরের ‘মডার্ন ফুড স্টোরেজ ফ্যাসিলিটিজ (এমএফএসপি)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং জিডি-২৭এ-এর আওতায় বাংলাদেশের সব খাদ্যগুদামে সফটওয়্যার স্থাপন, ডেটা সেন্টার স্থাপন, ইন্টারনেট কানেকশন, মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন ও সফটওয়ার-সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি সরবরাহ কাজের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৬১ কোটি ৭০ লাখ ৭৬ হাজার ৬০৯ টাকা। যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বেক্সিমকো কম্পিউটার্স লিমিটেড, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (বেক্সিমকো), টেক মহিন্দ্র লিমিটেড, ইন্ডিয়া ও টেক ভ্যালি নেটওয়ার্কস লিমিটেড।

এছাড়া বৈঠকে পাঁচ হাজার ৬২৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইন্টেন্যান্স ড্রেজিংয়ের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। এ বিষয়ে ড. শাহিদা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ‘পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইন্টেন্যান্স ড্রেজিং’-এর ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বেলজিয়ামভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি জ্যান ডি নুল (জেডিএন)। এতে ব্যয় হবে পাঁচ হাজার ৬২৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। বৈঠকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের চারটি কোস্টাল প্যাসেঞ্জার ভ্যাসেল সরবরাহ ও নির্মাণকাজের ক্রয় প্রস্তাবেও অনুমোদন দেয় কমিটি। কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স প্যাসেঞ্জার ভ্যাসেলগুলো সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ২৩০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।