ব্যাংকের যোগসাজশে ঋণ জালিয়াতি রোধ করুন

আমাদের ব্যাংক খাতে ঋণ কেলেঙ্কারির পরিসংখ্যান বেশ দীর্ঘ। প্রায় এক যুগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকার পরও রাষ্ট্রীয় সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের অবস্থার উন্নতি হয়নি। পিছিয়ে নেই বেসরকারি ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলোকে নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিন মাস পর পর পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বসলেও নাজুক পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়নি।

গতকাল আমরা শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জেনেছি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সহায়তায় উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডারের ঋণ জালিয়াতির খবর। এতে বলা হয়েছে, একাধিক আইন লঙ্ঘন করেছে ব্যাংক ও গ্রাহক নিজের ব্যাংক থেকেই ঋণ জালিয়াতি করেছেন উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার ও সাবেক পরিচালক হারুনুর রশিদ। একের পর এক আইন লঙ্ঘিত হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বেসরকারি খাতের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। উল্টো আদালতে ভুয়া ও অপর্যাপ্ত তথ্য দিয়ে সাবেক এই পরিচালককে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ঋণখেলাপির দায়ে এ ব্যাংকের পরিচালক পদ হারিয়েছিলেন তিনি। এই মুহূর্তে কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না সাবেক এ পরিচালকের। হয়তো আর কখনোই তার খোঁজ পাওয়া যাবে না। একসময় দেশে আসবেন। নতুন করে শুরু করবেন সবকিছু।

আমরা বিশ্বাস করি, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও পদস্থ ব্যাংকারদের যোগসাজশ ছাড়া বড় কোনো অনিয়ম সংঘটন সম্ভব নয়। আলোচ্য অনিয়মে জড়িত স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আমাদের প্রতিবেদককে বলেছেন, তাদের লিগ্যাল ডিপার্টমেন্ট দক্ষতার সঙ্গেই কাজ করছে। কোনো কমতি নেই।’ অথচ তথ্য বিশ্লেষণ করে একজন খ্যাতিমান বিশ্লেষক বলেছেন, এখানে বড় ধরনের ঘাপলা আছে। বিষয়টি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের খতিয়ে দেখা উচিত। পাশাপাশি অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা দরকার।

একসময় ঋণ কেলেঙ্কারি বিষয়ে সাধারণ মানুষ তেমন বুঝত না, জানত না। এখন  তারাও বড় কেলেঙ্কারি নিয়ে ব্যঙ্গ করেন। কিছু প্রশ্নও ছুড়ে দেয়। এত কেলেঙ্কারি সত্ত্বেও নতুন নতুন ঋণ জালিয়াতি ও  কেলেঙ্কারি ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থাকে আরও খারাপ করেছে। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সে অর্থে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার দৃষ্টান্ত নেই। ঋণ কেলেঙ্কারির আলোচিত হল-মার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, মাদারটেক্স, মাদারীপুর স্পিনিং ও বেনিটেক্স, অ্যাননটেক্স,  ক্রিসেন্ট, রিমেক্স ফুটওয়্যার বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক জালিয়াতি যেনতেনভাবে সামাল দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

আমরা মনে করি, ব্যাংকগুলোর উন্নতি করতে হলে সরকারের অঙ্গীকার থাকতে হবে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা কমিটি ও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় কতিপয় ব্যবসায়ী মিলেমিশে ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর অর্থ লুটপাটে মেতেছেন।  দোষী ব্যক্তির রাজনৈতিক বা সামাজিক অবস্থান বিবেচনা না করে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। নির্মোহভাবে অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনা করে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। কোনোরূপ শৈথিল্যের কারণে দুষ্কৃতকারীরা যেন ব্যাংক খাতকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা এবং অর্থ লুটপাটের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে।