রোহিঙ্গাদের সাহায্য প্রদান কার্যক্রমে এনজিওগুলোর অস্বচ্ছতা

এসএম নাজের হোসাইন: বাংলাদেশ ২০১৭ সালে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদান করে বিশ্বে মানবিক এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পুরো বিশ্বে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ

হাসিনার এই সাহসী কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে তাকে ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। দেশ-বিদেশের অনেক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও মানবিক প্রতিষ্ঠান রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য প্রদানে এগিয়ে এসেছে। জাতিসংঘ ও তার অন্তর্ভুুক্ত অনেক প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সরকার এই মানবিক কার্যক্রমে তাদের সহায়তার হাত প্রসারিত করেছে। কিন্তু এই মানবিক কর্মকাণ্ডে অস্বচ্ছতা, অনিয়ম ও অসংগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে অনেক প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ আছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক ত্রাণ কাজে নীতিমালাহীন ক্রয় ও কর্মী নিয়োগে অস্বচ্ছতার কারণে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। চাকরির দাবিতে একসময় স্থানীয় বেকার তরুণরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর গাড়িবহর আটকে দিয়েছিল এবং অসন্তোষের আন্দোলন দানা বেঁধেছিল।

ফলে দেশব্যাপী স্থানীয়করণ আন্দোলন ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) রোহিঙ্গাদের মানবিক কার্যক্রমে নানা অসংগতির চিত্র খুঁজে পায় বলে সংবাদ সম্মেলন করে তুলে ধরেছিল। তাদের দেয়া তথ্যমতে, ‘বেসরকারি অংশীজনদের তথ্য প্রদানে অনীহা আছে। তারা নিজেদের স্বচ্ছ বললেও তারা সেটা করছে না। জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থাগুলোর দেয়া কর্মসূচি ব্যয়ের মধ্যে তাদের অনুদানে পরিচালিত এনজিওগুলোর পরিচালন ব্যয়ও অন্তর্ভুক্ত।’ টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার কাজে থাকা এনজিওগুলো নিজেদের পরিচালন ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ করতে চায় না। যে হিসাব তারা দেয়, প্রকৃত ব্যয় তার চেয়ে বেশি। সেখানে বলা হয়, জাতিসংঘের যে সংস্থাগুলো কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রে কাজ করছে, তাদের মধ্যে ইউএন উইমেনের পরিচালন ব্যয় সবচেয়ে বেশি। যে টাকা তারা সেখানে খরচ করছে, তার ৩২ দশমিক ছয় শতাংশই ব্যয় হচ্ছে পরিচালন বাবদ। বাকি ৬৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ অর্থ মানবিক সহায়তা কর্মসূচিতে খরচ করছে তারা। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ সাড়া দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বিদেশি এনজিও এ কাজে সম্পৃক্ত রয়েছে। কিন্তু কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ দেয়া অর্থের একটি বড় অংশ বিলাসিতায় ব্যয় করছে বলে এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক তখন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিদেশি এনজিওগুলো বরাদ্দের তিন-চতুর্থাংশই বাংলাদেশে আসা তাদের কর্মীদের জন্য ব্যয় করছে। কেবল ছয় মাসেই এনজিও কর্মকর্তাদের হোটেল বিল বাবদ খরচ করা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। আর তাদের জন্য ফ্ল্যাট ভাড়ায় ব্যয় হয়েছে আট কোটি টাকা।

রোহিঙ্গাদের মানবিক কাজে প্রথম থেকেই বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে বেশ অসন্তোষ ছিল। একটি স্থানীয়দের চাকরি প্রদান, অন্যটি স্থানীয় এনজিওদের কাজের সুযোগ প্রদান না করা এবং কেনাকাটায় অনিয়ম, যে কারণে ‘কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম’ নামক একটি জোট থেকে স্থানীয়করণ বিষয়ে বেশ প্রচার-প্রচারণা করা হলেও আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। যদিও তাদের স্থানীয়করণ সব দেশীয় এনজিওগুলোই স্থানীয় হিসেবে বিবেচনা করায় কার্যত এই স্থানীয়করণের দাবিটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়েছে। কারণ দেশের বৃহত্তম এনজিও ব্র্যাকও স্থানীয় এনজিও এই সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত হয়েছে, যা স্থানীয়করণের মূল দাবির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা কর্মকাণ্ডে যুক্ত এরকম এনজিও কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, এখানে কর্মরত আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর সরাসরি কার্যক্রম বাস্তবায়ন না করার বিধান থাকলেও অনেকেই সেই নীতি প্রতিপালন না করে নিজেরা মাঠে সরাসরি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে, ফলে চার্টার ফর চেঞ্জ (সি৪) ও লোকালাইজেশন নীতির বরখেলাপ হচ্ছে। জাতিসংঘভুক্ত অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোকে সহায়তা প্রদান করছে। আর আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক বেতন কাঠামো ও অন্যান্য নিয়মকানুন অনুসরণ করার ফলে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি। আবার আন্তর্জাতিক এনজিওতে কর্মরত দেশীয় অনেক কর্মকর্তা স্থানীয় এনজিও নিয়োগের বিধানের কারণে স্থানীয় এনজিও’র নামে দেশের অন্যপ্রান্ত থেকে এনজিও কক্সবাজারে নিয়ে এসেছেন। তাদের বক্তব্য হলো এসব এনজিওর সঙ্গে তাদের পূর্ব অংশীদারিত্ব চুক্তি ও কার্যক্রম চলমান ছিল। আবার অনেকে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন, কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিওগুলো সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। সে কারণে তারা বাধ্য হয়ে দেশের অন্যান্য জেলা থেকে তাদের পূর্বপরিচিত এনজিওদের কাজ দেয়ার জন্য এখানে এনেছেন। তাদের মধ্যে একটি পক্ষ আবার বিভিন্ন জেলা থেকে স্থানীয় এনজিও ভাড়া করে নিয়ে এসে চুক্তিভিত্তিক কাজের সুযোগ করে দেন। ঠিক একইভাবে স্থানীয়দের চাকরি দেয়ার বেলায়ও একই ধরনের পন্থা অবলম্বন করেছেন। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এনজিওগুলোর এদেশীয় কর্মকর্তারা তাদের নিজ জেলার মানুষ ও আত্মীয়স্বজনদের চাকরি প্রদানের জন্য কক্সবাজার জেলায় নিয়ে এসেছেন। এমনকি পিয়ন-আয়াও নিজ জেলা থেকে আমদানির ঘটনাও কম নয়। তাদের যুক্তি হলো স্থানীয় মানুষের যেহেতু এ ধরনের মানবিক কাজের পূর্ব-অভিজ্ঞতা নেই, সে কারণে তারা অভিজ্ঞ মানুষকে চাকরি দিয়েছেন। নিয়ম রক্ষার স্বার্থে তারা চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করলেও স্থানীয় মানুষ প্রাথমিক বাছাইয়ে ঝরে পড়েন। ফলে এখানে কর্মরত দেশীয় এনজিও কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য আছে, এমন লোকজন চাকরি পান, যা স্থানীয় লোকজনের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করে।

ঠিক একইভাবে কক্সবাজারে কর্মরত আন্তর্জাতিক একটি এনজিওতে কর্মরত এক ঊর্ধ্বতন কর্মকতার সঙ্গে আলাপে জানা যায়, তারা করোনা মোকাবিলায় তিন মাসের একটি কাজ স্থানীয় এনজিওদের দিয়ে করানোর প্রক্রিয়া শুরু করলেন। কিন্তু শর্ত জুড়ে দিলেন ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম থাকতে হবে এবং মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির লাইসেন্স থাকতে হবে। যুক্তি হলো যাদের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম আছে, তাদের নিজস্ব কর্মী ও উপকারভোগী আছে। ফলে তাদের নতুন করে কর্মী নিয়োগ করতে হবে না। আর যাদের মাঝে সচেতনতা ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে, তারাও মোটামুটি তৈরি আছে। ফলে নির্ধারিত তিন মাসের অনেক আগে তাদের কাজ সফলভাবে মাঠ থেকে তুলে আনা সম্ভব হবে। আবার অফিস সামগ্রী ক্রয়, বিভিন্ন ছোটখাটো কাজ, কেনাকাটা ও টেন্ডার  ঢাকায় তাদের হেড অফিসের নির্দিষ্ট ভেন্ডরের মাধ্যমে সম্পাদনের নামে ঢাকাভিত্তিক কিছু মানুষকে তারা কাজের সুযোগ করে দিচ্ছেন। ফলে স্থানীয় লোকজন এসব কাজ থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হলো, এর আগে এনজিওগুলো কীভাবে স্থানীয় এনজিও ও চাকরিতে কর্মী নিয়োগ করত? এনজিও খাতে দীর্ঘদিন ধরে অভিজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনায় জানা যায়, তারা কোনো এলাকায় নতুন কোনো প্রকল্পে এনজিও নিয়োগ করতে চাইলে ওই এলাকায় জরিপ কাজ পরিচালনা করে তথ্য সংগ্রহ করতেন। তথ্য সংগ্রহে তারা স্থানীয় প্রশাসন, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমকর্মীদেরও কাজে লাগাতেন। অনেকে এনজিওদের শীর্ষ সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান এডাব থেকে ওই এলাকার কর্মরত এনজিও সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতেন। পরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরেজমিনে তাদের অবস্থান ও কার্যক্রম পরিদর্শন করে এনজিও নির্বাচন করতেন। ফলে স্থানীয় এলাকায় তাদের অবস্থান ও কার্যক্রম সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকত। স্থানীয় এনজিওগুলো সহজেই ওই কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেত। ঠিক একইভাবে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও স্থানীয় লোকজনকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়টি চাকরির বিজ্ঞাপনে পরিষ্কার উল্লেখ থাকত। ফলে কার্যক্রম পরিচালনায় সহজেই স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যেত। আর কোনো সময় এনজিও কার্যক্রমকে বাণিজ্যিকভাবে দেখা হতো না, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা হতো। রোহিঙ্গাদের মানবিক কার্যক্রমে এসব বিষয় পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। এনজিও নিয়োগ ও কর্মী নিয়োগসহ বিভিন্ন কেনাকাটার কাজ প্রদানে কোন সুনির্দিষ্ট নীতি অনুসরণ করা হয়েছে, তা দৃশ্যমান নয়। যেভাবে পারা যায় সেভাবে নিয়োগ ও ক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। ফলে কক্সবাজারে দেশের সবকটি জেলা থেকে এনজিও আমদানির পাশাপাশি এনজিওদের মাঠকর্মী থেকে শুরু করে অফিসের পিয়ন পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা থেকে আমদানি করা হয়েছে। ফলে এনজিওদের নিয়োগ ও ক্রয় নিয়ে জনমনে অসন্তোষ ও ক্ষোভ সঞ্চার হয়েছে।

বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন বহুজাতিক দাতা সংস্থার সহায়তাপ্রাপ্ত সরকারি প্রকল্পগুলোয় এনজিও নিয়োগে টেন্ডার প্রথা চালু, পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট জমা, ব্যাংক গ্যারান্টি, ভ্যাট, টিআইএন দাখিল, ক্ষুদ্রঋণের লাইসেন্স, এনজিও নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম এবং সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট এনজিও নিয়োগ করা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি দাতা সংস্থার অনুদান পেতে স্থানীয় এলাকায় কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষ জনবল, প্রস্তাবিত কর্মাঞ্চলে অবস্থান প্রভৃতি যোগ্যতা বাদ দিয়ে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের বিশাল অঙ্কের ঋণ তহবিল, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির লাইসেন্স আছে কি না এবং পিকেএসএফের সহযোগী সংস্থা, বিশাল দালান-স্থাপনা আছে কি না, ঢাকায় অফিস আছে কি না  প্রভৃতি বিষয় অন্যতম যোগ্যতা হিসেবে নির্ধারণ করে প্রকারান্তরে এনজিওগুলোকে ব্যবসায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। ফলে অনেকেই গাছ, বাঁশ ও রিয়েল স্টেট ব্যবসার ফাঁকে নতুন করে এনজিও ব্যবসায় ঝুঁকে পড়েছেন। সরকারি অন্য সব সেক্টরে কেনাকাটার জন্য প্রণীত ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট, ২০০৮’ অনুসরণ করে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে এনজিও নিয়োগ করে এনজিওদের অলাভজনক কার্যক্রমকে ঠিকাদারি ব্যবসায় পরিণত করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলার কাজ করার জন্য খুলনা, ঢাকা ও দিনাজপুর থেকে এনজিওগুলো কন্ট্রাক্ট নিয়ে আসে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে না হতেই ওই এনজিও অফিস ও কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে। ফলে স্থানীয় সামাজিক উদ্যোগ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ব্যবসায়ী ধারার উত্থান হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দপ্তরের সঙ্গে সখ্যের সুযোগে কয়েকটি এনজিও দেশব্যাপী সব সরকারি প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করছে। সেখানে স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ও সমাজ পরিবর্তনে নিবেদিতপ্রাণ ক্ষুদ্র ও মাঝারি এনজিওগুলো তহবিল না পেয়ে অস্তিত্বের সংকটে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। অথচ স্থানীয় এনজিওকে কাজটি দেয়া হলে স্থানীয় উদ্যোগটি উৎসাহিত হতো, প্রকল্পের ব্যয় কমত এবং কাজের স্থায়িত্ব বাড়ত, প্রকল্প উপকারভোগীরা ওই স্থানীয় এনজিও থেকে ধারাবাহিকভাবে সেবা পেতেন। কিন্তু তা বাদ দিয়ে এখন টেন্ডারবাজ এনজিওদের কাজ দেয়ার ফলে এনজিওর নামে অনেকেই নানা অপকর্ম ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন, যাতে এনজিওদের মানবিক কাজের সুনাম ও পরিবেশ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

তাই জরুরিভাবে রোহিঙ্গাদের মানবিক কার্যক্রমে স্থানীয় এনজিও ও কর্মী নিয়োগে এনজিও ও অলাভজনক সামাজিক সেক্টরের জন্য পৃথক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট (চচজ অপঃ) প্রণয়ন করা আবশ্যক, যেখানে রোহিঙ্গাসহ যে কোনো মানবিক বিপর্যয়ের তৎপরতরায় এনজিও নিয়োগে স্থানীয় উদ্যোগ এবং স্থানীয় এনজিও নিয়োগের বিধান নিশ্চিত করা দরকার। স্থানীয় এনজিওর সংজ্ঞাও সুনির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এনজিও নিয়োগে বিডিং প্রথা বাতিল, সামাজিক ব্যবসার নামে এনজিওকে বাণিজ্যিকীকরণে স্বার্থান্বেষী মহলের অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে। ঠিকাদারি কায়দায় বরিশালের এনজিওকে কক্সবাজারে কাজ প্রদান বন্ধ, বড় ধরনের ক্ষুদ্রঋণের তহবিল, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির লাইসেন্স থাকা এনজিওদের অগ্রাধিকার প্রদান বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে। নতুবা রোহিঙ্গাদের সাহায্যের মতো মানবিক কার্যক্রম, এনজিও ও অলাভজনক সেক্টরে দুর্নীতি, অনিয়ম, এনজিও নিয়ে দুর্নাম, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও অব্যবস্থাপনার পরিসমাপ্তি ঘটবে না, যা দেশের মানবিক সেবামূলককার্যক্রমের জন্য সুদূরপ্রসারীভাবে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ভাইস প্রেসিডেন্ট

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)

cabbd.nazer@gmail.com