কমছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়

শেখ আবু তালেব: বছর পার হলেই তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়েই চলত দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই)। গত বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ছিল এ ধারা। এর পর থেকেই কমে যাচ্ছে তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমানত সুদহার কম হওয়া ও করোনা মহামারিতে ঋণ চাহিদা খুব একটা না থাকায় কমে যাচ্ছে তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ।  

এনবিএফআইগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ শীর্ষক বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। জানা গেছে, গত বছরের এ-সংক্রান্ত হাল নাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সাল শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত তহবিল ব্যবস্থাপনার গড় ব্যয় ছিল ৯ দশমিক ২৯ শতাংশ। ২০১৯ সাল শেষে তা হয় ৯ দশমিক ৫১ শতাংশে।

গত বছরের মার্চে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১০ দশমিক ২৫ শতাংশে। এরপর থেকেই তা কমতে থাকে। চলতি বছরের মার্চ শেষে তা নেমেছে আট দশমিক ২৪ শতাংশে। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কমেছে দুই শতাংশীয় পয়েন্ট বলে জানা গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের মার্চের পর থেকেই নাটকীয়ভাবে কমছে তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ। ২০২০ সালের এপ্রিলে এ ব্যয় ছিল ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ, মে মাসে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ, জুন শেষে ৮৯ শতাংশ, জুলাই মাসে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ, আগস্টে ৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ, অক্টোবরে ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ, নভেম্বরে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং ডিসেম্বরে নেমে হয় আট দশমিক ৭১ শতাংশ।

জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসেও তা কমে গিয়ে দাঁড়ায় আট দশমিক ৫১ শতাংশে। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে আট দশমিক ৪৮ শতাংশ ও মার্চ মাসে হয় আট দশমিক ২৪ শতাংশ। এটি হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে পাওয়া কম সুদের অর্থের গড় তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল ব্যয়ের চিত্র প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালা অনুযায়ী, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব সংগৃহীত আমানত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের পাশাপাশি কম সুদের বিদেশি তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের চিত্র আলাদাভাবে প্রকাশ করতে হয়। নিজস্ব সংগৃহীত আমানতের বিপরীতে গড় ব্যয় দাঁড়িয়েছে গত মার্চ শেষে সাত দশমিক ২০ শতাংশ, এক বছর আগে যা ছিল ৯ দশমিক ১১ শতাংশ। এ খাতেও কমেছে এক দশমিক ৯১ শতাংশ।

অথচ তিন বছর আগে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ব্যয়ের এ দুই হার ছিল যথাক্রমে সাত দশমিক ৭৬ শতাংশ ও আট দশমিক ৫৮ শতাংশ। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন বছর ধরেই অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ।

এসব খরচ বৃদ্ধির বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের বড় উৎস হচ্ছে ব্যাংক। তবে গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে ঋণ-আমানত (এডিআর) অনুপাত নির্ধারিত সীমার মধ্যে রয়েছে। কারণ হচ্ছে, আমানতের সুদহার কমিয়ে এক অঙ্কে নামিয়েছে সব ব্যাংক। আাবার করোনা মহামারিতে বিনিয়োগ চাহিদা কমে গেছে। এখন সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। এজন্য তারল্যর কোনো অভাব নেই। ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে সুদব্যয় কমে গেছে আগের চেয়ে। এর প্রভাবে কমেছে সার্বিক ব্যয়।

২০১৩ সাল পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় ডাবল ডিজিট বা ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত ছিল। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ও সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে একটি নীতিমালা প্রকাশ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ ও আমানতের সহজলভ্যতার ফলে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে কমে আসছিল এনবিএফআই’র সমন্বিত তহবিল ব্যয় ব্যবস্থাপনা।

মূলত ব্যাংকগুলো বিভিন্ন মেয়াদে আমানত নিতে পারলেও এনবিএফাইগুলো তা পারে না। বিদ্যমান নিয়মে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তিন মাসের কম মেয়াদের জন্য কোনো আমানত নিতে পারে না। ফলে গ্রাহকের কাছ থেকে সরাসরি আমানত সংগ্রহের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকেই তুলনামূলক বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করে থাকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। আর ব্যাংকের চেয়ে বেশি সুদে ঋণ বিতরণ করে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে প্রতিষ্ঠানের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় ব্যাংকের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি হয় সব সময়।

দেশে বর্তমানে ৩৫টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) রয়েছে। মোট এনবিএফআই’র মধ্যে ২৩টি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে পিপলস লিজিং অবসায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।