যুক্তরাষ্ট্রের কবি, গীতিকার, আলোকচিত্রী ও মঞ্চ অভিনেতা অ্যালেন গিন্সবার্গ ছিলেন যুদ্ধবিরোধী। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশের পক্ষে পূর্ণ সমর্থন জানান। একাত্তরের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি কলকাতায় বেড়াতে এসে বন্ধুত্বের সূত্রে সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে ওঠেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় গিন্সবার্গসহ সঙ্গীদের নিয়ে যান বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোয়। সেসময় অনেক বৃষ্টি হওয়ায় যশোর রোড পানিতে ডুবে গিয়েছিল। সড়কপথে না পেরে গিন্সবার্গ ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নৌকায় করে বনগাঁ পেরিয়ে বাংলাদেশের যশোর সীমান্তে এসে এর আশপাশের শিবিরগুলোয় বসবাসকারী শরণার্থীদের করুণ অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন। অ্যালেন গিন্সবাগ যশোর রোডের পাশে গড়ে ওঠা শরণার্থী শিবিরের হাজার হাজার মানুষের নির্মম হাহাকার নিয়ে রচনা করেন ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ কবিতা। তার এই কবিতার সূত্র ধরেই গায়িকা মৌসুমী ভৌমিক রচনা করেন তার ‘যশোর রোড’ গানটি। অ্যালেন গিন্সবার্গ এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়ে তার বন্ধু বব ডিলান ও অন্যদের সহায়তায় এই কবিতাকে গানে রূপ দেন। এই কবিতার মাধ্যমেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি তার একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং তিনি ভারতের শরণার্থীর প্রকৃত পরিস্থিতি বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে প্রতিবেদন রচনা করেন। ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউ ইয়র্কের মডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ‘পণ্ডিত রবি শংকর’ ও জর্জ হ্যারিসন আয়োজিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এ তিনি অংশগ্রহণ করেন। এই কনসার্টে প্রায় আড়াই লাখ ডলার সংগৃহীত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অর্থ সংগ্রহের জন্য ‘কনসার্ট ফর বাঙলাদেশ’ ছাড়াও গিন্সবার্গ ওরাশিয়ার ইয়েভগেনি ইয়েভ তুসোস্কোর সঙ্গে মিলে কবিতা পাঠের আসরও আয়োজন করেন।
অ্যালেন গিন্সবাগ ১৯২৬ সালের এই দিনে নিউ জার্সিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৩ সালে তিনি ইস্টসাইড হাই স্কুল থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি সামরিকতন্ত্র, অর্থনৈতিক বস্তুবাদ ও যৌন নিপীড়নের বিষয়ে জোরালোভাবে বিরোধিতা করেন। গিন্সবার্গ তার ‘হাউল-১৯৫৬’ মহাকাব্যের জন্য সর্বাধিক পরিচিত হন, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদের ধ্বংসাত্মক শক্তির নিন্দা করেন। ১৯৯৭ সালের ৫ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কাজী সালমা সুলতানা