গো-খাদ্যের দাম বাড়ল, দিশাহারা সিরাজগঞ্জের খামারিরা

শরীফুল ইসলাম ইন্না, সিরাজগঞ্জ: কভিড-১৯ এর কারণে দফায় দফায় গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দিশাহারা সিরাজগঞ্জের গো-খামারিরা। কেননা এ কারণে খামারিদের লাভ কমে যাচ্ছে। দাম না কমলে বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হবে তাদের।

ঈদুল আজহা সামনে রেখে সিরাজগঞ্জে বিপুলসংখ্যক গরু ও ছাগল মোটাতাজা করেন খামারিরা। ঈদ যতই এগিয়ে আসছে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে চলেছে। এতে খামারিদের খরচ বাড়ছে।

এছাড়া উল্লাপাড়া উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুরে সরকারি ২৭ কোটি টাকা অর্থ সহায়তা ও মিল্কভিটার অর্থায়নে গো-খাদ্য উৎপাদন প্লান্টটিও বন্ধ থাকায় সমস্যা আরও প্রকট রূপ নিয়েছে বলে খামারিরা জানিয়েছেন। তবে খামারিদের ভর্তুকির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে জানিয়ে শাহজাদপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার জানিয়েছেন শিগগির খামারিদের আর্থিক সহায়তা দিতে পারব।

খামারিরা জানান, গমের ছাল বস্তাপ্রতি এক হাজার ১০০ ছিল। বর্তমানে এর দাম এক হাজার ২০০ টাকা। কাউফিড বস্তাপ্রতি ৯০০ টাকা থেকে হয়েছে এক হাজার ৫০ টাকা। ডালের ভূষি প্রতিবস্তা (৩৫ কেজি) কিনতে হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকায়। অ্যাংকর ডালের ভূষি ৮০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ধানের খড়ের দামও বেশি। খড় কিনতে হচ্ছে ৬০০ টাকা মণ দরে। প্রতি শতাংশ জমির জাম্বু ঘাস কিনতে হচ্ছে ৩০০ টাকায়। প্রতি শতাংশ জমির নেপিয়ার ঘাস ৪০০ টাকায়।

১৯৭৩ সালে সমবায়ভিত্তিক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার একটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা শাহজাদপুরের বাঘাবাড়িতে নির্মাণ করা হয়। মিল্কভিটা কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠে হাজার গরুর খামার। বর্তমানে এ অঞ্চলে প্রায় ৮০০ দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রাথমিক সমিতির প্রায় দুই লাখ গবাদি পশু প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন লাখ লিটার দুধ দেয়। উৎপাদিত এ দুধের প্রায় এক লাখ লিটার দুধ মিল্কভিটা ও ৫০ হাজার লিটার দুধ অন্য বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানি সংগ্রহ করে থাকে। অবশিষ্ট প্রায় দুই লাখ লিটার দুধ সিরাজগঞ্জসহ আশেপাশের জেলার দোকান, মিষ্টি জাতীয় খাবার উৎপাদনকারী ও স্থানীয় বাজারগুলোয় বিক্রি করেন খামারিরা।

উন্নতজাতের গাভী পালন করে জেলার হাজার খামারি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এমন অনেক খামারি রয়েছেন যাদের কৃষি কাজ করে সংসার চলত না তারাই খামার দিয়ে শুধু দুধ বিক্রি করে প্রতিদিন হাজার টাকা আয় করছেন। সব মিলে এ অঞ্চলে আর্থিক অবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু মহামারির কারণে গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে। এতে লোকসানে পড়েছেন খামারিরা।

শাহজাদপুরের মশিপুর গ্রামের ভাই ভাই ডেইরি ফার্মের পরিচালক শাহান উদ্দিন বলেন, প্রতি বছর আমি ষাড় গরু লালন পালন করে ঈদের আগে বিক্রি করি। ভালো মুনাফা হয়। কিন্তু চলতি বছর  খরচ বেড়েছে। এক বস্তা গমের ভূষির দাম ছিল ৯৫০ টাকা, সেই ভূষি এখন ১৩০০ টাকা। এক আটি খড়ের দাম আট থেকে ১০ টাকা। খাদ্যের দাম কমানো গেলে হয়তো আমি লাভবান হতে পারব।

উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সফল খামারি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি একজন সফল খামারি। আমার খামারে ১০০ গরু রয়েছে। ঈদ সামনে রেখে গরুগুলোকে দেশীয় প্রযুক্তিতে মোটাতাজা করছি। তবে গরুর খাদ্যের দাম এত বেশি হওয়ায় খরচ বেড়েছে। কোরবানির হাটে গরুর ভালো দাম পাব কি না তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

মিল্কভিটার পরিচালক আব্দুস সামাদ ফকির বলেন, গো খাদ্যের দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি। না খাওয়ালে তো গরু বাঁচানো যাবে না। দানাদার খাদ্য ও খড়ের দাম অনেক বেশি। খামারিরা নিজে না খেয়ে গরু লালন পালন করছে। সরকার নানা প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিচ্ছে। একই ভাবে যদি খামারিদের অনুদান দিত তাহলে খামারিরা ঘুরে দাঁড়াতে পাড়ত।

রেশরবাড়ি গ্রামের খামারি রেজাউল করীম বলেন, গরু লালনপালন করে লাভ হচ্ছে না। যখন খৈল ভূষির  দাম কম ছিল তখন লাভ ছিল। দুধের দামের চেয়ে এখন খৈলের দাম বেশি। দুধের দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা লিটার বিক্রি করছি।

শাহজাদপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা বলেন, লকডাউনের কারণে দেশের অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়েছে। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি শিল্পের ওপরও প্রভাব পড়েছে। প্রত্যেক খামারিদের বড় সমস্যা দুধের দাম কম পাওয়া ও গো খাদ্যের দাম বেশি হওয়া। এ বিষয় নিয়ে আমরা সরকারিভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। খামারিদের ভর্তুকি বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি, শিগগির খামারিদের আর্থিক সহায়তা করতে পারব।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, খাদ্যের দাম বেড়েছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। ব্যবসায়ীরা এটা করে থাকে। সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। সরকার চেষ্টা করছে এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে। খামারিরা যাতে লোকসানে না পড়ে এজন্য সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। গরুর মালিকদের সরকারিভাবে নগদ টাকা, খাবার ও ওষুধ দেয়া হয়েছে। ১০ লাখ গরু বিনা খরচে সরকারের টিকা পাবে।