কেন অপারেশনে আসতে পারছে না পিপলস ব্যাংক?

নিজস্ব প্রতিবেদক: কর পরিশোধিত টাকার অভাবে অপারেশনে আসতে পারছে না প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক। জোগাড় হচ্ছে না পেইড আপ ক্যাপিটালের (মূলধন) ৫০০ কোটি টাকা। মূলধনের এ অর্থ জোগাড় করতে ব্যাংকটির উদ্যোক্তারা দেশি-বিদেশি অনেক বিনিয়োগকারীর কাছেই ধরনা দিচ্ছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এটি চূড়ান্ত লাইসেন্স পাবে কি না, তাতেও দেখা দিয়েছে সন্দেহ। তবে এসব গুঞ্জন সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের মতো এই অর্থনীতির এদেশে আর কোনো ব্যাংকের প্রয়োজন নেই।

অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পিপলস ব্যাংকের পেইড আপ ক্যাপিটালের (পরিশোধিত মূলধন) অর্থ জোগাড় করার অভিযোগ উঠেছিল ব্যাংকের এক পরিচালকের বিরুদ্ধে। এতেই আটকে যায় ব্যাংকটির চূড়ান্ত অনুমোদন। একই সঙ্গে আবেদন করে অন্য দুটি ব্যাংক তাদের কর্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু কী কারণে পিপলস ব্যাংক এখনও অপারেশনের আসতে পারছে না সে বিষয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ার আগে উদ্যোক্তাদের বিষয়ে সার্বিক তদন্ত করা দরকার। তা না হলে পরবর্তীকালে বিপাকে পড়তে পারে গ্রাহক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম শেয়ার বিজকে বলেন, আমার ব্যাংকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সবগুলো মিথ্যা। কিছু কার্যক্রম বাকি থাকায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য কিছুটা সময় নিচ্ছি আমরা। তবে পেইড আপ ক্যাপিটালের অর্থ জোগানসহ যেসব গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে তার সবগুলোই ভিত্তিহীন।

শিগগির পিপলস ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হবে আশা ব্যক্ত করে তিনি জানান, করোনার কারণে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীই এখন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া ব্যাংক খাতের এই প্রতিযোগিতার বাজারে নতুন করে শুরু করা সোজা কাজ নয়। আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেই আমরা বাজারে আসতে চাই এবং সেটা খুব তাড়াতাড়ি।

২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড মিটিংয়ে বেঙ্গল কমার্শিয়াল, সিটিজেন ও পিপলস নামে নতুন তিনটি ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। তবে নতুন ব্যাংকের জন্য জুড়ে দেয়া হয় ৫০০ কোটি টাকা মূলধনের শর্ত, যা আগে ছিল ৪০০ কোটি। এর মধ্যে কেবল পিপলস ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন প্রক্রিয়া আটকে গেছে। এ বিষয়ে আবুল কাশেম বলেন, আমি অন্য দুটি ব্যাংকের চেয়ে এক বছর পরে লেটার অব ইন্টেন্ট (এলওআই) পেয়েছি। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই আমার কার্যক্রম শুরু করতে কিছুটা দেরি হওয়ার কথা। সব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে অতিরিক্ত দুইবার সময় বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক তদন্তে উঠে আসে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পিপলস ব্যাংকে ১০ কোটি টাকা মূলধন বিনিয়োগ করেছিলেন শহীদুল আহসান, যিনি নিজেও ছিলেন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের একজন পরিচালক। এর মাধ্যমে তার মালিকানাধীন এজি অ্যাগ্রোর প্রতিনিধি হিসেবে মেয়ে রাহনুমা আহসানকে পরিচালক করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আইনবহির্ভূত হওয়ায় এ সুযোগ হারায় আহসান গ্রুপ। নিয়ম অনুযায়ী, কর পরিশোধ করা আয়কেই শুধু মূলধন হিসাবে দেখানো যায়। ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ কর পরিশোধিত টাকার মধ্যে পড়ে না।

২০০৯ সাল থেকে বর্তমান মহাজোট সরকারের তিন মেয়াদে এখন পর্যন্ত ১৪টি বেসরকারি ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২টিতে। ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকটি প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করায় চূড়ান্ত অনুমোদন পাচ্ছে না। তবে শর্ত পূরণে একাধিকবার সময় চাওয়ায় সন্দেহের চোখে দেখছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের দেশে এখন নতুন কোনো ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও নতুন নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। নতুন ব্যাংক এলেও ব্যাংক খাতে নতুন কোনো সেবা যুক্ত হচ্ছে না। মুনাফায় যাওয়া এসব ব্যাংকের খুব কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, নতুন ব্যাংক অনুমোদনের আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেক কাজ আছে। উদ্যোক্তাদের টাকার উৎস ও তাদের সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করা অত্যন্ত জরুরি। পেইড আপ ক্যাপিটালের অর্থের উৎস, উদ্যোক্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখার দায়িত্বও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। এটাকে ডিউ ডেলিজেন্স বলা হয়। এখানে স্বচ্ছতা না থাকলে সাধারণ গ্রাহক বিপাকে পড়তে পারেন বলে মত এই অর্থনীতিবিদের।