বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা, ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদের ৭৫তম জন্মদিন আজ। তিনি শহীদ আজাদ নামে সমাধিক পরিচিত। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ২নং সেক্টরের অধীন গেরিলা দল ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য ছিলেন। আজাদের জন্ম ঢাকায় ১৯৪৬ সালের ১১ জুলাই। আজাদ সবসময়েই ছিলেন স্বাধীনচেতা তরুণ। সেই সঙ্গে দুরন্ত, গানপাগল, সিনেমাপ্রেমী আর বইপড়–য়া। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করে দেশে ফিরে আসেন। এরপর ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে এম.এ পাস করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে, যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন আজাদ। নাম লেখান আরবান গেরিলা দল ক্র্যাক প্লাটুনে। বেশ কিছু সফল অভিযানও অংশ নেন তিনি। ঢাকা শহরে তারা মোট ৮২টি অপারেশন পরিচালনা করেন। সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনে অভিযান তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট রাজাকার আলবদরদের সহায়তায় ক্র্যাক প্লাটুনের আরও কয়েকজন সহযোদ্ধাসহ আজাদ নিজ বাড়ি থেকে পাক-হানাদারদের হাতে ধরা পড়েন। তাকে ধরে নিয়ে রাখা হলো নাখালপাড়ার ড্রাম ফ্যাক্টরি সংলগ্ন এমপি হোস্টেলের মিলিটারি টর্চার সেলে। মুক্তিবাহিনীর তথ্য নেয়ার জন্য তার ওপরে চালানো হয় নিষ্ঠুর অত্যাচার। তার মা যখন তার সঙ্গে বন্দি অবস্থায় দেখা করেন, মায়ের কাছে আজাদ ভাত খেতে চান। পরদিন ছেলের জন্য ভাত নিয়ে দেখা করতে গিয়ে আর তাকে খুঁজে পাননি আজাদের মা। এই ছেলে আর কোনো দিনও ফিরে আসেনি। ধারণা করা হয়, সেদিনই ঘাতকরা মেরে ফেলেছিল আজাদকে। ছেলেকে ভাত খাওয়াতে না পারার কষ্টে তারপর দীর্ঘ ১৪ বছর আজাদের মা জীবনে আর ভাত খাননি, ছেলের অপেক্ষায় শুধু ভাতই নয়, ১৪ বছর তিনি বিছানায়ও শোননি। এর মূল কারণ ছিল, তার আজাদ রমনা থানায় আটক থাকাকালে বিছানা পায়নি। এই বাস্তবতা নিয়ে পরে লেখক আনিসুল হক তার বিখ্যাত ‘মা’ উপন্যাস রচনা করেন।
কাজী সালমা সুলতানা