নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে কভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ৪৬তম বার্ষিকী সামনে রেখে গতকাল ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা জানান তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনি যাদের সাজা হয়েছে, শুধু তারা এককভাবে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তা নয়, এর পেছনে একটা ষড়যন্ত্র আছে। ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে তাদের নাম জনসম্মুখে প্রকাশের সিদ্ধান্ত সরকার ইতোমধ্যে নিয়েছে। এই কমিশনের রূপরেখা কী হবে? এই কমিশনের কার্যাবলি কী হবে এবং এই কমিশনটা কাদের দ্বারা গঠিত হবে। এই জিনিসগুলো কভিডের প্রকোপটা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনারা দেখতে পাবেন।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। একদল সেনা কর্মকর্তা এ হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দিলেও এর পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা আওয়ামী লীগ নেতারা বরাবরই বলে আসছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের উল্টো যাত্রা হয়েছিল। খুনিদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, তাদের নানা পদ দিয়ে পুরস্কৃতও করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর ইতিহাসে চিহ্নিত কালো ওই অধ্যাদেশ বাতিলের পর জাতির জনকের খুনের বিচারের পথ খোলে। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম তখন ধানমন্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ওই মামলায় ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার তখনকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আপিলের রায়ে এই ১৫ জনের মধ্যে তিনজন খালাস পান। যে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন উচ্চ আদালত, তাদের একজন আজিজ পাশা পলাতক থাকা অবস্থায় দেশের বাইরে মারা যান বলে খবর আসে। বাকি ১১ জনের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ, মহিউদ্দিন আহমদ, একে বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন বন্দি অবস্থায় আদালতে রিভিউ আবেদন করলে তা খারিজ হয়ে যায়। এরপর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ওই পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হয় ঢাকার কারাগারে। বাকি ছয়জন পলাতক থেকে যান।
তার প্রায় ১০ বছর পর গত বছর ৭ এপ্রিল ভোরে পলাতক ছয়জনের একজন ৭২ বছর বয়সী মাজেদকে ঢাকার গাবতলী থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় সরকার। পলাতক মাজেদের আপিলের সুযোগ ছিল না। রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেছিলেন, যা নাকচ হয়ে যাওয়ার পর কেরানীগঞ্জের কারাগারে ১২ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রসঙ্গ টেনে মামলা পরিচালনায় যুক্ত আনিসুল হক বলেন, ‘প্রথমে আমরা যেটা করেছিলাম, সেটা হচ্ছে যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলা শেষ করা এবং এই যে পলাতক আসামি যারা আছেন, তাদের রায় কার্যকর করার জন্য তাদের ফিরিয়ে আনা। তারপর যেটা হয়, সেটা হচ্ছে আলাপ-আলোচনার মধ্য থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে আসে এবং এটা আমাদের জানা থাকলেও জনসম্মুখে স্পষ্টতার জন্য ƒ শুধু তারা এককভাবে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতÑতা নয়, এটার পেছনে একটা ষড়যন্ত্র আছে। এবং সে ষড়যন্ত্রকারী কারা, তাদের অন্ততপক্ষে চিহ্নিত করে সারাদেশের মানুষের কাছে তাদের নামটা অন্ততপক্ষে জানিয়ে দেয়া।’
চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া হিসাবে তদন্ত কমিশন করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নেয়ার পরে গত মার্চ মাসের ৮ তারিখ ২০২০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত কিন্তু দেশে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। সেটা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বে। সে কারণে আমরা যে রূপরেখাটি তৈরি করেছি, সেটা কিন্তু এখনও জনসম্মুখে এবং সেটার ব্যাপারে আমরা এখনও সিদ্ধান্ত দিতে পারিনি।’