স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি ও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা

শিক্ষা একজন মানুষকে প্রকৃত মানুষ হতে সাহায্য করে। জন্মের পরেই কেউ মানুষ হয়ে ওঠে না, বরং শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে নিতে হয়। একজন শিক্ষিত মানুষ তার মেধা ও প্রজ্ঞা কাজে লাগিয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়ন করতে পারে। বাংলাদেশের সংবিধানে যে ছয়টি মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে, সেখানে কিন্তু শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের শিক্ষার অধিকার রয়েছে, যা সংবিধানের ২৭ থেকে ৪৭ নম্বর ধারায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আমরা জানি বর্তমানে দেশের পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অন্যতম কারণ হলো দেশের উন্নয়নে নিজেদের যেন শামিল করতে পারে। তাই তার শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। আজ আর শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্য দেখা যায় না। বৈষম্য না থাকার অন্যতম কারণ হলো সরকারের সুনজর। বৈষম্য না থাকার কারণেই আজ শহর ও গ্রাম উভয় জায়গায় শিক্ষার গুরুত্ব সমানভাবে পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বর্তমানে যে অবস্থা বিরাজ করছে, তা আলোচনা করার দাবি রাখে। তাই এই প্রবন্ধে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সামান্য আলোচনা করা হবে। আমরা জানি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা কয়েকটি ধাপে বিভক্ত, যার মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার ব্যয়ভার সরকার বহন করে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্নাতক শ্রেণির শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। উচ্চমাধ্যমিক তবুও দুই বছরের শিক্ষা কোর্স। এই দুই বছরের কোর্স সম্পন্ন করার পরে একজন শিক্ষার্থীকে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হতে হয়। স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তিতে আবার রয়েছে দুই ক্যাটেগরিÑপাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়, যেখানে পাস করার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী পাবলিকে পড়াশোনা করার সুযোগ লাভ করে। বিপরীতে অন্যরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কলেজে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করে। আমরা জানি এবার করোনা মহামারির কারণে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয় না। দেয়া হয়েছে তাদের অটো পাস। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারেনি। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে, যার ফলে দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মাঝে সিদ্ধান্তহীনতার ছাপ। কারণ জাতীয়  বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি হতে হয় এইচএসসির রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে। যার রেজাল্ট ভালো, সে ভালো কলেজে ভালো বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পায়। অন্যদিকে পাবলি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয় ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে, যেখানে দীর্ঘ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একটা আসন গ্রহণ করতে হয়। এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছে। তাতে দেখা যাবে ভালো রেজাল্টধারীরা ভালো কলেজগুলোয় ভর্তি হবে এবং অন্যরা নি¤œমানের বেসরকারি কলেজগুলোয় ভর্তি হবে। এর ফলে দেখা যাবে ভালো কলেজে ভর্তি যারা হবে তাদের মধ্যে অনেকে পাবলিকে চান্স পাওয়ার মাধ্যমে কলেজে ভর্তি বাতিল করবে। কিন্তু এই ভর্তি বাতিলের ক্ষেত্রে দেখা যায় বিড়ম্বনা। কারণ কলেজে ভর্তি হতে গেলে কলেজভেদে দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু আবার এই ভর্তি বাতিল করতে গেলে আবার দরকার হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকা, যা শিক্ষার্থীর কাছে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। আবার অন্যদিকে এই যে ভর্তি বাতিল করার মাধ্যমে তারা কলেজ ছেড়ে চলে গেল, তখন ওইসব কলেজে আসন ফাঁকা থাকে। ওই আসন পূরণ করার জন্য যে পরিমাণ শিক্ষার্থী দরকার হয়, সেই পরিমাণ শিক্ষার্থী আর তখন পাওয়া যায় না। এর ফলে আসন ফাঁকা থেকে যায়। কারণ অনেকে এরই মধ্যে বিভিন্ন কলেজে ভর্তি সম্পন্ন করে। আবার এখানে বৈষম্যের শিকার হয় ওইসব শিক্ষার্থী, যারা হয়তো সামান্য রেজাল্ট খারাপ করেছিল। কিন্তু তারা প্রকৃত মেধাবী ছিল, কারণ রেজাল্ট দিয়ে কখনও মেধা যাচাই করা যায় না। অনেকে রয়েছে যাদের মধ্যে সৃজনশীল প্রতিভা রয়েছে, কিন্তু তারা প্রতিভা বিকাশ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রেজাল্টের গ্যাঁড়াকলের মাধ্যমে। সুপ্ত প্রতিভাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশ করার আগে কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে প্রকৃত শিক্ষিত মানুষ তৈরি করতে পারছে না। তাই দরকার দেশের জাতীয় পর্যায়ের কলেজগুলোকে ঢেলে সাজানো। আর এমন একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যার মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যক্তি সুযোগ পায় এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে ধারা রয়েছে, সেটা যেন অব্যাহত থাকে। এমন প্রত্যাশা দেশের সচেতন নাগরিকদের।

জাফরুল ইসলাম

শিক্ষার্থী, আরবি সাহিত্য বিভাগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়