নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে আরও তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল উল্লেখ করে অধ্যাপক এম তমিম বলেন, যুদ্ধের সময়তো কামান গোলাবারুদ কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করা যাবে না। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানও যুদ্ধের মতো। তাই বাপেক্সকে নানা সরকারি নিয়ম-নীতির জালে বেঁধে রেখে অনুসন্ধান কাজে সাফল্য পাওয়া যাবে না। শনিবার (১৪ আগস্ট) অনুষ্ঠিত ইপি টকসে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেছেন।
এ আয়োজনে যুক্ত জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইতোমধ্যে হাতে থাকা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মনে হচ্ছে, গভীর কাঠামোতে তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা আরও যাচাই-বাছাই করে ৭ থেকে ১০টি লোকেশনে গভীর স্তরে তেল গ্যাস অনুসন্ধান কাজ শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন।
মোল্লাহ আমজাদ হোসেনের এমটুকে ইপি টকস অন ডিপ অ্যান্ড হাইপ্রেসার জোন হাইড্রোকার্বন এক্সপ্লোরেশন প্রসটেক্ট ইন বাংলাদেশ শিরোনামের ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক ড. এম তামিম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ ফারুক চিশতি। প্যানেলিস্ট হিসেবে কানাডা থেকে যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম, ঢাকা থেকে যুক্ত ছিলেন ইউএমসি ও ওশান এনার্জির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এম ফরিদউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন থেকে যুক্ত হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার আবদুস সালেক সূফি।
অধ্যাপক তামিম বলেন, হঠাৎ প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাস সরবরাহ কমে গেলে জ্বালানি সরবরাহে বড় বিপর্যয় হতে পারে। কেননা এলএনজির জোগান বাড়িয়ে এ ঘাটতি মেটানো সম্ভব নয়। আশা করতে চাই, হঠাৎ উৎপাদন কমবে না। যদিও গত এক বছর দেশীয় উৎপাদন ১৫০ থেকে ২০০ এমএমসিএফডি কমে গেছে।
বিদেশি কোম্পানিকে যখন কাজ করার অনুমোদন দেয়া হয়, তখন যথাযথভাবেই ডেপথ লিমিট করে দেয়া উচিত। ডিপ জোনকে আলাদা জোন হিসেবে চিহ্নিত করা প্রয়োজন।
আমাদের যে কোনো সম্ভাবনা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। ঝুঁকি কম থাকা এলাকায় যেমন ড্রিল করতে হবে, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়ও কাজ করতে হবে। আগে ভার্জিন ফিল্ডে কাজ করে ৩টা ড্রিল করে একটায় গ্যাস পাওয়া গেছে। এখন অন্তত ৫টা ড্রিল করা উচিত। ড্রিল করে সবসময় সাফল্য পাওয়া যাবে এমন নয়। কিন্তু সাফল্য না এলেও অনুসন্ধান অব্যাহত রাখতে হবে।
অফশোরে কাজ করার জন্য আমাদের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যেতেই হবে, বাপেক্স একা এটা করতে পারবে না। তবে সবার আগে অফশোরে মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে শেষ করে তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে হবে। নইলে কেউ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বিনিয়োগ করবে না।
বাপেক্সের পরামর্শক এম ফরিদউদ্দিন বলেন, গ্যাস শেষ যাচ্ছে এমন ভেবে আতঙ্কিত নই, আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাপেক্স ব্যবস্থা নিচ্ছে। যেভাবে গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে তা কীভাবে মেটানো যায় তা নিয়ে কাজ হচ্ছে। নিজেদের উৎস থেকে গ্যাস সংগ্রহ করতে হবে। এজন্যই গভীর স্তরে কূপ খনন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, আমাদের ওভারপ্রেসার জোনে গ্যাস আছে কী নেই তা নিয়ে এখনও যথেষ্ট সমীক্ষা হয়নি। এটা করা প্রয়োজন। অন্যদিকে বেশ কয়েকটি কাঠামোয় গভীর স্তরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের সুযোগ আছে। যদিও তা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই হাতে থাকা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মডেলিং করার পর গভীর স্তরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করা উচিত।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বাপেক্সের ২ডি এবং ৩ডি সিসমিক পর্যালোচনা করে দেখা গেছে অঞ্চল ভেদে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ কাঠামো রয়েছে। তথ্য বলছে, তিতাস, বাখরাবাদ, ফেঞ্চুগঞ্জ, শাজবাজপুর ও পাবর্ত্য চট্টগ্রামে এখনও গভীর স্তরে অনুসন্ধানের সুযোগ আছে এবং বড় সাফল্য পাওয়া যেতে পারে।
খন্দকার আবদুস সালেক সালেক সূফি বলেন, গভীর কূপ খননে চ্যালেঞ্জ আছে। কিছু বিদেশি কোম্পানির ভুলের কারণে কয়েকটি ফিল্ড ব্লোআউট হয়েছে। ফলে গভীর কূপ খনন নিয়ে সরকারের এক ধরনের আতঙ্ক আছে।
মূল প্রবন্ধে মর্তুজা আহমেদ ফারুক চিশতি বলেন, আমাদের মজুদ গ্যাস আগামী ১০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। দেশে এ পর্যন্ত স্থলভাগে ১৬টা ডিপ ড্রিলিং করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪টায় গ্যাস পাওয়া গেছে। অফশোরে ৯টা ডিপ ড্রিল হয়েছে। তিতাস গ্যাসফিল্ড থেকে আরও গ্যাস পাওয়া সম্ভব। লোয়ার জোনে থ্রি-ডি জরিপ করার পর ৬টা জোন পাওয়া গেছে। এখানে ৩টা কূপ খননের প্রস্তাব রয়েছে। আশা করা যায় এখানে আরও নিচের দিকে গ্যাস পাওয়া যাবে।