ক্রিসমাসে ব্রিটেনে শিশুদের খেলনা সংকটের শঙ্কা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ক্রিসমাস ডে উপলক্ষে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের অন্যতম প্রধান উপহার সামগ্রী টয় বা খেলনাজাতীয় জিনিসপত্র। ব্রিটিশরা ক্রিসমাসের বেশ আগে থেকেই শিশু-কিশোরদের জন্য খেলনাজাতীয় উপহার সামগ্রী কিনে রাখেন। কিন্তু সম্প্রতি কভিডের ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের কন্টেইনার-স্বল্পতায় এরই মধ্যে এসব পণ্যের দাম অনেকগুণ বেড়ে গেছে। খাতসংশ্লিষ্টদের শঙ্কা, এখনই পদক্ষেপ না নিলে আসন্ন ক্রিসমাসে টয়পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে। খবর: গার্ডিয়ান।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, এখন আগস্ট মাস। ক্রিসমাসের ঢের বাকি; কিন্তু ব্রিটেনের খেলনা দোকানশ্রমিকরা এরই মধ্যে গ্রীষ্মের ছুটি উপভোগ করছেন। আপনি জানেন, আপনার শিশুরা ক্রিসমাসের কী উপহার চায়; কিন্তু চলতি বছরে বাড়তি দামের কারণে আপনি তা এড়িয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে টয় ইন্ডাস্ট্রি দ্য অবজারভারকে জানায়, ভোক্তারা এরই মধ্যে ক্রিসমাসের খেলনা কিনতে চড়া দামের সম্মুখীন হচ্ছেন। ফলে অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে ক্রেতার এসব কেনার পরিকল্পনা ভণ্ডুল হতে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে টয় শপ চেইনের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ‘দ্য এন্টারটেইনার’-এর প্রতিষ্ঠাতা গ্যারি গ্রান্ট বলেন, আমি আতঙ্কিত হতে চাই না; কিন্তু আমি বলতে পারি যে অনেক বছর ধরে ক্রিসমাসের জিনিসগুলোর জন্য আরও বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হবে। তিনি বলেন, আমি বাবা-মায়েদের এটা পরামর্শ দিতে চাই, আপনাদের সন্তান ক্রিসমাসে যা যা চায় বা সন্তানকে যা যা দেবেন, যত দ্রুত সম্ভব সেসব কিনুন, তা না হলে হতাশায় ভুগতে হবে।

দাম বৃদ্ধির কারণে অনেক আমদানিকারক তাদের অর্ডার বিলম্বে পাচ্ছেন। এমনকি  মূল্য পরিশোধ করার পরও অনেক আমদানিকারকের কনটেইনার পেতে দেরি হয়। 

টয় রিটেইলারস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এলান সিম্পসন বলেন, শিপিং থেকে পণ্যের কনটেইনার পেতে অতিরিক্ত ৩০ হাজার ডলার বেশি পরিশোধ করেছেন। কিন্তু আপনি যদি দাম দিতে রাজিও হন, তার মানে এই নয় যে আপনি নিশ্চিত পণ্য পেতে যাচ্ছেন। কিন্তু কনটেইনার স্বল্পতার কারণে পণ্য নাও পেতে পারেন। ফলে অনিশ্চয়তা আরও বাড়বে।

আর গ্যারি গ্রান্ট বলেন, আমরা চীন থেকে ২০০ কনটেইনার আনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছি, কিন্তু ট্রান্সপোর্ট সমস্যায় যথাসময়ে ওইসব পণ্য নাও পেতে পারি। ফলে ক্রিসমাসে আমাদের তথা গোটা যুক্তরাজ্যে শিশুপণ্যের ঘাটতি থেকেই যাবে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, করোনার কারণে গত বছর কন্টেইনারের খরচ ১০ থেকে ১৫ গুণ বেড়ে গেছে। গ্যারি গ্রান্ট জানান, চীন থেকে ৪০ ফুটের একটি কনটেইনার ব্রিটেনে আনতে এক হাজার ৫০০ ডলার খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু বর্তমানে তা বেড়েছে ১০ গুণ।

এদিকে গত বুধবার বন্দরে একজনের কভিড শনাক্ত হওয়ায় বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এবং চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও ব্যস্ততম সামুদ্রিক কার্গো বন্দর ‘নিংবো মেইডং কনটেইনার টার্মিনাল’ আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দেয় চীনের কর্তৃপক্ষ। এর ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক সরবরাহ-শৃঙ্খল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তখন ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহামারি কভিড ও বন্যার কারণে অনেক বৈদেশিক ক্রয়াদেশ বাতিল করতে হয়েছে। নতুন করে ক্রয়াদেশ বাড়ার পর ফের বন্দর বন্ধ হলে বৈশ্বিক সরবরাহ-শৃঙ্খল ব্যাহত হবে।

ফ্রাইইগটস বাল্টিক গ্লোবাল কনটেইনার সূচকে বলা হয়, এর ফলে চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শিপিং খরচ এরই মধ্যে রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাজ্যের কিছু ব্যবসায়ী এরই মধ্যে উদ্বেগও জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে ওশান শিপিং কনসালটেন্টের জ্যাসন চিয়াং বলেন, করোনা মহামারির কারণে কয়েক মাস ধরে বৈশ্বিক শিপিং ইন্ডাস্ট্রিতে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, দুই বছর ক্ষতিপূরণ দিয়ে আমরা নতুন শিপিং ক্যাপাসিটি চাই না।