শেয়ার বিজ ডেস্ক: চীনে নতুন করে কভিড সংক্রমণ না হওয়ায় গতকাল সোমবার এশিয়ার পুঁজিবাজারে সূচকের অবস্থান ঊর্ধ্বমুখী ছিল এবং একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। সম্প্রতি চীন-জাপানে কভিডের নতুন ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত এক সপ্তাহে বিশ্ব পুঁজিবাজারসহ এশিয়ার পুঁজিবাজারে শেয়ারের দর অনেক কমে যায়। একই সঙ্গে কমেছে জ্বালানি তেলের দামও। খবর: রয়টার্স।
গত জুলাই থেকে চীনে ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। কভিড শনাক্ত হওয়ায় চীনের বৃহত্তম কার্গো বন্দর বন্ধ করতে বাধ্য হয় চীনের কর্তৃপক্ষ। এমনকি বিভিন্ন প্রদেশে কভিডের গণপরীক্ষা করা হয়। তবে গতকাল নতুন কোনো কভিড রোগী শনাক্ত না হওয়ার খবরে চীন তথা এশিয়ার পুঁজিবাজারে স্বস্তি ফিরে আসে। বিনিয়োগ বাড়াতে শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বাড়তে থাকে শেয়ারের দামও।
এদিকে স্থানীয় সময় সোমবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলতি আগস্টের বৈশ্বিক শিল্পোৎপাদন নিয়ে একটি গবেষণা জরিপ প্রকাশ করা হবে। বিশ্লেষকদের ধারণা, ওই জরিপে ডেল্টা ধরনের প্রভাবে বৈশ্বিক শিল্পোৎপাদন হ্রাস পাবে। বিশেষ করে এশিয়ার শিল্প উৎপাদন।
এ বিষয়ে বোফার প্রধান বিনিয়োগ কৌশলবিদ মাইকেল হার্টেনেট বলেন, করোনা-পরবর্তী একটি শক্তিশালী ভি শেপের প্রবৃদ্ধি থেকে ধীরে ধীরে প্রবৃদ্ধি হ্রাসের অনেক কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডের দাম এক বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ, যা উদীয়মান স্টক ও ওয়াইটিডি উভয় বাজারেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া সম্প্রতি উচ্চ দাম থেকে তামা ও তেলের উভয় দাম অনেক হ্রাস পেয়েছে। তিনি বছরের বাকি সময়ও স্টক ও ক্রেডিটের নেতিবাচক ফল প্রত্যাশা করেন। এজন্য বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব গতিতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
এদিকে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোয় চীনের কড়া শাসনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। গত সপ্তাহে হংকং ও চীনের স্টক এক্সচেঞ্জে প্রযুক্তি খাতের ৫৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ তুলে নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ চীনের কঠোর নীতি এ খাতের লক্ষ্য হতে পারে। ফলে সপ্তাহব্যাপী এশিয়ান পুঁজিবাজারের পতন দেখা গেছে।
ফলে গত সপ্তাহে জাপানের বাইরে এশিয়া প্যাসিফিকের এমএসসিআই’স ব্রডেস্ট সূচক রেকর্ড চার দশমিক আট শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সেখান থেকে গতকাল সোমবার সূচক এক দশমিক চার শতাংশ বেড়েছে। আর জাপানের নিক্কি ২২৫ সূচক গতকাল এক দশমিক আট শতাংশ বেড়েছে, যেখানে গত সপ্তাহে তিন দশমিক চার শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল, যা গত ডিসেম্বর থেকে সর্বোচ্চ পতন। আর চীনের ব্লু চিপ সূচক তিন সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থান থেকে এক দশমিক দুই শতাংশ দূরে অবস্থান করছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক ফিচারস ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক উভয়ই শূন্য দশমিক তিন শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ইউরোপের পুজিবাজারে ইউরোস্টক্স ৫০ সূচক শূন্য দশমিক তিন শতাংশ এবং এফটিএসই ফিচারস শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডের চেয়ারম্যান পদে আবার জেরাম পাওয়েলকে নিয়োগ দিচ্ছে, এমন খবরে মার্কিন ডলারের দাম আবারও বেড়েছে। গত সপ্তাহে একক মুদ্রা শূন্য দশমিক আট শতাংশ হ্রাস পাওয়ার পর গতকাল বেড়ে ১.১৭২০ ডলার হয়েছে। আর গত সপ্তাহে ডলার সূচকের ট্রেডিং ৯৩.৩২৩ থেকে গতকাল বেড়ে ৯৩.৭৩৪ ডলারে বিক্রি হয়েছে, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। আর জাপানি মুদ্রা ইয়েনের বিপরীতেও ডলারের দাম বেড়েছে। গতকাল ১০৯.৮৯ ইয়েন সমান এক ডলার ছিল।
এদিকে স্বর্ণের দাম গতকাল স্থীতিশীল ছিল। যদিও আগস্টেও শুরুতে অনেক পড়ে গিয়েছিল। আর কভিডের কারণে বৈশ্বিক তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় গত সপ্তাহে তেলের দাম অনেক কমে গিয়েছিল। গতকাল সেখান থেকে বেড়ে কিছুটা পুনরুদ্ধার করেছিল, যা গত ৯ মাসের মধ্যে সাপ্তাহিত ভিত্তিতে ভালো। গতকাল ব্রেন্ট ১.২৪ ডলার বেড়ে ব্যারেল ছিল ৬৬.৪২ ডলার, আর ইউএস ক্রুড ১.১৭ ডলার বেড়ে ব্যারেলপ্রতি দাম ছিল ৬৩.৩১ ডলার।