নিজস্ব প্রতিবেদক: জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে এক দশক আগে দেশে ‘কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট’ চালু করা হয়েছিল। বিশেষ আইন দিয়ে তার মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন, ২০২১’-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
তিনি বলেন, জরুরি পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ঘাটতি মোকাবিলায় ২০১০ সালে বিশেষ আইনটি করার পর এরই মধ্যে কয়েকবার তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। বর্তমান মেয়াদ ছিল ২০২১ পর্যন্ত। ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের এবং ২০৪০ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমাদের যে পরিকল্পনা আছে, সেজন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি যাতে আমরা নির্বিঘেœ সরবরাহ করতে পারি। এজন্য ২০২৬ সাল পর্যন্ত এটার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ২০১০ সালে প্রণীত বিদ্যুৎ-জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইনটির মেয়াদ একাধিকবার বাড়ানো হয়। সর্বশেষ তিন বছর বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২১ সাল পর্যন্ত করা হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলায় অতি দ্রুত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের তাৎক্ষণিক পরিকল্পনায় তিন বছর, পাঁচ বছর ও ১৬ বছর মেয়াদি ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন শুরু করে। এসব ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বৈধতা দিতে নতুন আইনটি করা হয়। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুত বেড়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল হয় বলে সরকারের দাবি। তবে এসব কেন্দ্র থেকে উচ্চ দামে বিদ্যুৎ কিনতে সরকার অনেক টাকা ভর্তুকি দেয়, যেজন্য একে জনগণের পকেট কাটা বলে সমালোচনা শুরু হয়েছিল। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২০২৪ সালের মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হবে বলে গত মার্চে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, আইনটি খুবই কার্যকর, তাই আমাদের আরও পাঁচ বছর দরকার। আগের আইনটারই কেবল সময় বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে। এটা ছিল স্পেশাল প্রভিশন আইন। ২০১০ সালে বিভিন্ন স্পেশাল প্রভিশন প্রয়োজন হলো। জেনারেল যে ক্রয় প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, তার বাইরে কিছু এক্সট্রা লাগবে। সেটার জন্য এই আইন করা হয়। এখন দেখা যায়, এটা কার্যকর, ভালোভাবেই চলছে। এজন্য মন্ত্রণালয় আরও পাঁচ বছর সময় বাড়িয়ে নিয়েছে।’
দেশে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে বলে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কিছুদিন আগেও উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, আজকে যে পরিসংখ্যান দেখলাম, তাতে শিল্প-কারখানায় চাহিদা আরও বাড়ছে। পদ্মা সেতু আগামী বছর শেষ হলে ওই পাড়ে যে পরিমাণ বিনিয়োগ শুরু হবে, সেজন্য ম্যাসিভ এনার্জির প্রয়োজন হবে। সেজন্য তারা দেখেছেন, ওইসব ক্ষেত্রে স্পেশাল প্রভিশনগুলো প্রয়োজন। সেজন্যই তারা নিয়ে এসেছেন।’
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ (অধস্তন কর্মচারী) কল্যাণ তহবিল আইন, ২০২১’-এর খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘১৯৮৬ সালের একটা অধ্যাদেশ ছিল, সামরিক শাসনের সময় যে অধ্যাদেশ ছিল সেগুলো বাদ দিয়ে নতুন আইন করতে হবে। এটা আগেই ছিল। যেমন পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর থেকে নিচ পর্যন্ত যারা, তাদের জন্য আলাদা একটা কল্যাণ তহবিল আইন আছে। সেটা যেহেতু অর্ডিন্যান্স ছিল, তাই ২০১৩ সালের জাজমেন্টের পরিপ্রেক্ষিতে এটাকে আইন করতে হবে। এটাকে আইন হিসেবে নিয়ে আসছে। আমাদের সরকারি কর্মচারী কল্যাণ তহবিল আছে। পুলিশ বা বিভিন্ন ইউনিফর্ম সার্ভিসে দুটা, পুলিশের হলো ১০ গ্রেড থেকে ২০ গ্রেড পর্যন্ত একটা। আর ১০ গ্রেডের ওপরে যেটা, সেটা আমাদের সরকারি কর্মচারী আইন দিয়ে চলে। কিন্তু তারা আবার এটার মধ্যে পড়ে না। সেজন্য এই আইনটা নিয়ে আসা হয়েছে, কল্যাণ ফান্ডটা যাতে পায় বা ব্যবহার করতে পারে।’
মাসিক চাঁদা ৮৫ টাকা অথবা বোর্ড থাকবে। বোর্ড যেটা নির্ধারণ করে দেবে, সেই পরিমাণ দিতে হবে বলে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সাব-ইন্সপেক্টর ও এর নিচের কর্মচারী যারা থাকবেন, তারা সবাই অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। সেখানে সরকারি কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের মতো যে বোর্ড আছে, সেরকম এখানেও একটা বোর্ড থাকবে। আইজি নিজেই সে বোর্ডের চেয়ারম্যান। কিছু বিষয় অধ্যাদেশে ছিল, তা নতুন আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদি কেউ মারা যায়, সেক্ষেত্রে তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে কারা কীভাবে তহবিল থেকে টাকা পাবে সেটা মুসলিম পরিবার আইন বা হিন্দু আইনে যেভাবে আছে, সেভাবেই পাবে।’
এ ছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে সম্পাদিত সামরিক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা সহযোগিতা-সংক্রান্ত চুক্তির খসড়ায় ভূতাপেক্ষ অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।