নিজস্ব প্রতিবেদক: সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট অপসারণ বা তালা মারার ক্ষমতা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নেই বলে মন্তব্য করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, কনটেন্ট ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে গতকাল বিটিআরসি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদারে সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন অনলাইনে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র, সংস্থার মহাপরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ বক্তব্য দেন।
টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, শুধু টেলিফোন বা আইএসপি দিয়ে অপরাধ হয় না। ডার্ক ওয়েভে অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে। এখন সবচেয়ে বেশি অপরাধের মাধ্যম ইন্টারনেট। এক্ষেত্রে অসহায় প্রকাশ করা ছাড়া বিকল্প কিছু থাকে না। ভিপিএন অপরাধের বড় হাতিয়ার। দিনে দিনে অপরাধ করার হাতিয়ার বাড়ছে।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, বিটিআরসি কেবল টেলকো অপারেটর ও আইএসপিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এখন আপত্তিকর ওয়েবসাইটগুলো বাংলাদেশের সীমানায় বন্ধ করতে পারে। ২২ হাজারের বেশি পর্নো-জুয়ার সাইট বন্ধ করেছি। প্রতিদিনই যখন লিংক পাই তখনই বন্ধ করার চেষ্টা করি।
তিনি আরও বলেন, ‘বাকি বিষয়গুলো নিয়ে আমরা এক রকমের অসহায়ত্ব বোধ করি, আর তা হলো সোশ্যাল মিডিয়া। তারা তাদের মতো করে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বানায়, আমরা তাদের কৃপার ওপর নির্ভরশীল। সেটা আমাদের মেনে নিতে হবে। আমরা আশ্বস্ত করতে পারি, ফেসবুকের সঙ্গে নিয়মিত কথাবার্তা হয়।’
মন্ত্রী বলেন, যারা আইন-আদালতের কাছে যান তারা আমাদের অবস্থাটা বুঝবেন। তালা মারার ক্ষমতা বিটিআরসির নেই। যে জায়গায় কাজ করার সক্ষমতা রাখি না, তার দায় আমাদের ওপর দিলে অবিচার হবে। সামনে ফাইভজি চালু করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল অপরাধ বাড়ছে, আরও বাড়বে। আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। আমরা আমাদের দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছি। আমাদের দিক থেকে মনে হয় না কোনো ত্রুটি পাবেন। দিনরাত কাজ করছি।
মন্ত্রী বলেন, আদালেতের পক্ষালম্বন বা বিরোধিতার কোনোটাই আমরা করছি না। আদালতের রায় দেশের নাগরিক হিসেবে ব্যত্যয় করার কোনো কারণ নেই। আমরা আদালতের বক্তব্যের জন্য সংবাদ সম্মেলন করিনি। বিটিআরসি কোনটা করতে পারে কোনটা করতে পারে নাÑসেটি স্পস্ট করার জন্য সংবাদ সম্মেলন। আদালতকে সাংবাদিক সম্মেলনের সঙ্গে যুক্ত করবেন না। আদালতের বাইরে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ নেই, সেই সুযোগও চাই না।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিক নির্দেশনায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া বিধিবিধান অনুযায়ী কাজ করে চলছে। এরপরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সীমাবদ্ধতা কোথায়? সাইবার ওয়ার্ল্ড উম্মুক্ত বিষয়। মহাশূন্যে যে কেউ ঘুড়ি উড়াতে চায়। নিয়ন্ত্রণের জন্য নাটাই নিজের হাতে বা সুতা কেটে দিতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ বিটিআরসির হাতে নেই। আমরা বেশ কয়েকবার ফেসবুকের সঙ্গে মিটিং করেছি। আমরা চেষ্টা করছি, বাংলাদেশে একটা অফিস স্থাপন এবং তারা আমাদের কথামতো কাজ করে। আমরা অফিস স্থাপনের কাজ করতে পারিনি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হেনস্তার শিকার হলে প্রতিকারের জন্য বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, অনেক নারী, টিনেজাররা বিভিন্নভাবে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে। আমরা তাদের পরামর্শ দেই থানায় জিডি করে কপিটা আমাদের কাছে দেন। ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির কাছে অভিযোগ করলেও আমরা পাই। আবার সরাসরি আমরা কাজ করি। হটলাইন, ই-মেইলে, বিটিআরসির চেয়ারম্যানের ফেসবুকে দিতে পারেন।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, অনেক বিষয় আমাদের আদালত বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও জানেন না। সেসব বিষয়ে আপনাদের বলার সুযোগ হয়তো হয়নি। সাইবার সিকিউরিটি সেল আমি চালু করেছি। আমরা কাজ করছি, বসে নেই। জনস্বার্থে কাজ করছি। কিন্তু মানুষে দেখতে পায় না। যারা ভুক্তভোগী তারাই জানতে পারেন। অনেকেই বলে এটা করলেন না কেন, আমাদের কাছে না এসে আদালতে গিয়ে বলেন। এসব জায়গায় কিছু ঘাটতি আছে।