জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়া ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়া বৈশ্বিক সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকার প্রথম দিকে বাংলাদেশও রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য কোনো দায় না থাকা সত্ত্বেও বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছি আমরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের নানা প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে স্কটল্যান্ডের রাজধানী গ্লাসগোয় বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ ২৬) শেষ হয়েছে। এখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রীও একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছেন। সম্মেলনে বিশ্বনেতারা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা, জলবায়ুজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও ক্ষতি মোকাবিলায় অর্থায়ন দ্বিগুণ করা এবং প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দিতে উৎসাহিত করতে একাত্ম হয়েছেন। সম্মেলনে চিরবৈরী চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিস্ময়কর সহযোগিতার ঘোষণা ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে আশাবাদী করেছে। শীর্ষ দূষণকারী শিল্পোন্নত দেশগুলো এবং কম দূষণকারী কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে আস্থার সংকট দুই দেশের অর্থবহ সহায়তায় অনেকটা কমবে বলেই প্রতীয়মান।
এবারের জলবায়ু সম্মেলনে প্রথমবারের মতো দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। কয়লার ব্যবহার এখনই পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। চূড়ান্ত চুক্তিতে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ ও কোম্পানিগুলোকে দায় মেটাতে অর্থায়ন করতে বলা হয়েছে।
দরিদ্র দেশের জন্য ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় জলবায়ু পরিবর্তনে কোন দেশের দায় কতটা, তা আগে নির্ধারণ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান ও ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলের একটি বড় অংশজুড়ে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশের বসবাস। অথচ এ দেশগুলো বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের ৫০ শতাংশের জন্য দায়ী। এক দশক আগে বিশ্বের ধনী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে ২০২০ সাল নাগাদ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে। সেই প্রতিশ্রুতি তারা রক্ষা করেনি কিংবা করতে পারেনি। ক্ষতিপূরণ হিসেবে সুনির্দিষ্ট তহবিল জোগানোর আহ্বান বরাবরই নাকচ করে আসছে ধনী দেশগুলো। একমাত্র স্কটল্যান্ড সরকারই স্বেচ্ছায় সুনির্দিষ্ট পরিমাণে অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশের বসবাস চীনে। ১৮৫০ সাল থেকে গোটা বিশ্বে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়েছে, তার প্রায় ১৪ শতাংশের জন্য দায়ী দেশটি। এখনও চীন বিশ্বের সর্বোচ্চ কার্বন নির্গমনকারী দেশ। আশার কথা, জলবায়ু তহবিল গঠনে সম্মতি জানিয়েছে চীন।
কয়লা নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর জলবায়ু চুক্তিতে সম্মত হয় দেশগুলো। এ নিয়ে নির্ধারিত সময়ে সিদ্ধান্তে আসতে না পারায় সম্মেলনের সময় এক দিন বাড়ানো হয়। শেষ পর্যন্ত কয়লার ব্যবহার ‘ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার’ ব্যাপারে একমত হয় দেশগুলো। ফলে পূর্ণতা পায় গ্লাসগো ক্লাইমেট প্যাক্ট। কপের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে বিশ্বনেতারা ঐক্যবদ্ধ থেকে অবিরাম কাজ করলে নিছক চুক্তি নয়, গ্লাসগো ক্লাইমেট প্যাক্ট বিশ্ববাসীর জন্য স্বস্তিকর পরিবেশ নিশ্চিতে সক্ষম হবে।