পতনেও সিংহভাগ খাতের শেয়ারদর বৃদ্ধি নেতৃত্বে ব্যাংক

মো. আসাদুজ্জামান নূর: ধারাবাহিক তিন কার্যদিবস পতন হলো দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। গতকালের পুঁজিবাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সিংহভাগ খাতের শেয়ারদর বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৩টি খাতের শেয়ারদর বাড়ার বিপরীতে হ্রাস পেয়েছে ছয়টি খাতের। দিনের শুরুতে ক্রেতা-বিক্রেতা সমান সক্রিয় থাকলেও শেষ দিকে বেশি ইস্যুর বিক্রয় চাপে বাজারে পতন নেমে আসে।

বিক্রেতাদের প্রভাবে সূচক হ্রাস পায় ৯ পয়েন্ট। সূচকের পতনের সঙ্গে বাজার মূলধন শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর মধ্যে শুধু জ্বালানি খাতে বাজার মূলধন হ্রাস পেয়েছে শূন্য দশমিক ১২৮ শতাংশ।

গতকাল টেলিযোগাযোগ এবং সেবা ও রিয়েল এস্টেট খাতে ‘ক্রয় চাপ’ ছিল। অন্যদিকে ট্যানারি ও আইটি খাতে ‘বিক্রয় চাপ’ ছিল। গতকাল ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ার কেনার প্রতি আগ্রহী ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে ভালো শেয়ার বিক্রি করতে দেখা গেছে। এতে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে ‘ক্রয় চাপ’ ও ‘এ’ ক্যাটেগরির শেয়ারে ‘বিক্রয় চাপ’ ছিল।

গতকাল ডিএসইতে মোট ৩৬৮টি কোম্পানির ৩৯ কোটি ৯০ লাখ ১৫ হাজার ১৩৩টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। গতকাল লেনদেনকৃত সিকিউরিটিজের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫৬টির, কমেছে ১৭৬টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩৬টির। লেনদেনের পরিমাণ এক হাজার ৩১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে এটি ছিল এক হাজার ২২৬ কোটি ৪ লাখ টাকা।

ধারাবাহিকতা বজায় রেখে লেনদেনে নেতৃত্ব দিচ্ছে ব্যাংক খাত। ডিসেম্বর ক্লোজিং হওয়ায় মুনাফার আশায় এ খাতের বিনিয়োগ বাড়ছে বলে মনে করেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। গতকালের লেনদেনে চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে শীর্ষে থাকা ব্যাংক খাতের অবদান ছিল ৩২ দশমিক ০৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে লেনদেন হয় ৪০৫ কোটি ৮০ লাখ। আগের কার্যদিবসে লেনদেন বেশি হওয়ায় এ খাতের অবদান ছিল ৪০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। লেনদেনে শীর্ষে থাকলেও গতকাল লেনদেনে অংশ নেয়া এ খাতের বেশি সংখ্যক কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পেয়েছে। ১১টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার বিপরীতে কমেছে ১৭টির ও অপরিবর্তিত ছিল ৪টির।

গতকাল দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে বিবিধ খাত। ১৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ অবদানের দিনে লেনদেন হয় ১৭১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে এ খাতের অবদান ছিল ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। গতকাল ৭টি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাসের বিপরীতে বেড়েছে ৬টির।

তৃতীয় অবস্থানে থাকা বস্ত্র খাতের সমান ২৫টি করে কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে ও কমতে দেখা গেছে। আর অপরিবর্তিত ছিল ৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। গতকাল ১৪৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা লেনদেনের দিনে এ খাতের অবদান দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আগের কার্যদিবসে এ খাতের অবদান ছিল ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

১১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে গতকাল চতুর্থ অবস্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত। ৯ দশমিক ২১ শতাংশ অবদান রাখা এ খাতের সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ে। ১৭টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার বিপরীতে হ্রাস পায় ১২টির ও অপরিবর্তিত ছিল মাত্র একটির। আগের দিন সোমবার এ খাতের অবদান ছিল ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ।

৬৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ অবদান রাখা প্রকৌশল খাত গতকালের লেনদেন পঞ্চম অবস্থানে ছিল। এ খাতেরও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়তে দেখা গেছে। ২৫টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার বিপরীতে কমেছে ১৪টির ও অপরিবর্তিত থাকতে দেখা গেছে মাত্র দুটির। আগের কার্যদিবসে এ খাতের অবদান ছিল ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গতকালের লেনদেনে এর পরেই ছিল তিন শতাংশের একটু বেশি অবদান রাখা জ্বালানি, ট্যানারি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

গতকাল লেনদেন শেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের চেয়ে ৯ পয়েন্ট কমে ৭ হাজার ১৩ পয়েন্টে, ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ব্ল– চিপ বা ডিএস৩০ মূল্যসূচক ৬ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ৬৬০ পয়েন্টে এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ২ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৪৬৮ পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা যায়।