উত্তরণের পরও কয়েক বছর এলডিসি সুবিধাপ্রাপ্তি জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, টেকসই উত্তরণ নিশ্চিতে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পরও কমপক্ষে ৬ থেকে ৯ বছর যাতে এলডিসির সুবিধা বহাল থাকে, সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য আগামী সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় শুরু হতে যাওয়া ডব্লিউটিও মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রস্তাব তুলে ধরবে। এ ছাড়া উত্তরণের পর বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতার পাশাপাশি নিজেদের ‘ঘর গোছানো’ গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য রপ্তানি বাড়াতে পণ্যের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণ করতে হবে। আর সে জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলোয় সংস্কার প্রয়োজন।

অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গতকাল বাণিজ্য সচিব এসব কথা বলেন। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আসন্ন মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনকে সামনে রেখে ইআরএফ এ কর্মশালার আয়োজন করেছে।

আগামী ২৯ নভেম্বর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় শুরু হচ্ছে চার দিনব্যাপী ডব্লিউটিওর ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন (এমসি-১২)। কর্মশালায় এমসি-১২তে বাংলাদেশ কোন কোন বিষয় উত্থাপন করবে, কী ধরনের ফল আশা করছে, দরকষাকষির পদ্ধতি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়। রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে

 অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বিষয়ভিত্তিক কারিগরি অধিবেশনে বক্তব্য দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান এবং বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান। ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম।

বাণিজ্য সচিব বলেন, ২০২৬ সালের পরও বাংলাদেশ এলডিসি সুবিধা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আসন্ন ডব্লিউটিও সম্মেলনে উত্তরণের পর অন্তত ৬ থেকে ৯ বছর যাতে একই বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত থাকে, সে বিষয়ে এলডিসি দেশগুলো একমত হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এ বিষয়ে ইতিবাচক ঘোষণা আসবে। যদি কোনো কারণে ঘোষণা না আসে, তাহলে বাংলাদেশ এই আলোচনা জিইয়ে রাখবে। অন্যদিকে জিএসপি সুবিধা, ট্রিপস, মেধাস্বত্ব, মৎস্য খাতে ভর্তুকি নিয়ে বাংলাদেশ নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরবে। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে টিকে থাকা নিয়ে বাংলাদেশ চিন্তিত নয়। বিশ্বের যেসব দেশের বাজারে প্রতিযোগিতা করে পণ্য রপ্তানি করতে হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ ভালো করছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ভারতের বাজারে রপ্তানিতে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। এটা বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির জায়গা। এরপরও বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল সাপোর্ট মেজারস যেমন জিএসপি, জিএসপি প্লাস, ট্রিপসের সুবিধাগুলো চাইবে। এসব সুবিধা না থাকলে বড় বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব বলেন, ইইউ জিএসপির নিয়মে যে পরিবর্তন আনছে, সেখানেও বাংলাদেশের জন্য অনেক ইতিবাচক ইঙ্গিত রয়েছে। ফলে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সমস্যা হবে না। এছাড়া ট্রিপসের আওতায় ওষুধের মেধাস্বত্ব সুবিধা যাতে বাংলাদেশ পায়, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। এছাড়া আগামী রপ্তানি নীতিও এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেই প্রণয়ন করা হচ্ছে।

কারিগরি অধিবেশনে ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, এবারের ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অন্য অনেকগুলো দেশ বাংলাদেশের প্রস্তাবকে সমর্থন করছে অথবা একই ধরনের প্রস্তাব দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান সমঝোতা ও দরকষাকষির পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন। এক্ষেত্রে তিনি এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য নির্ধারিত সুবিধাগুলো নিশ্চিতে ডব্লিউটিওর বৃহৎ ও প্রভাবশালী সদস্য দেশগুলোর আন্তরিকতার গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরেন।