স্মরণীয়-বরণীয়

শিক্ষাবিদ, নাট্যকার ও ভাষাবিজ্ঞানী শহিদ মুনীর চৌধুরীর আজ ৯৬তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ১৯২৫ সালের ২৬ নভেম্বর ঢাকার মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিলে। তিনি ১৯৪৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে বিএ (সম্মান) এবং ১৯৪৭ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এবং ১৯৫৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। খুলনার ব্রজলাল কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে মুনীর চৌধুরী কর্মজীবন শুরু করেন। পরে জগন্নাথ কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সভায় তিনি তীব্র ভাষায় বক্তৃতা দেন। এজন্য নিরাপত্তা আইনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি জেলে ছিলেন। বন্দি অবস্থায় এমএ পরীক্ষায় তিনি বাংলায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। এরপর তিনি আরও দু’বার বন্দি হন। বন্দি অবস্থাতেই ১৯৫৩ সালে তিনি ঐতিহাসিক ‘কবর’ নাটক রচনা করেন। এছাড়া পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের কাহিনি নিয়ে রচনা করেন ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ (১৯৬২)। এতে তিনি যুদ্ধবিরোধী মনোভাব প্রকাশ করেন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলে তিনি একাত্মতা ঘোষণা করে ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সরকারের দেয়া সিতারা-ই-ইমতিয়াজ খেতাব বর্জন করেন। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সরকার রেডিও-টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার বন্ধের নির্দেশ দিলে তিনি তার প্রতিবাদ জানান। পরের বছর সংস্কারের নামে বাংলা বর্ণমালা বিলোপের উদ্যোগ নেয়া হলে তিনি তারও প্রতিবাদ করেন। মুনীর চৌধুরী মঞ্চ, বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র মাধ্যমে নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা ও সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৬৫ সালে বাংলা টাইপ রাইটার ‘মুনির অপটিমা’ উদ্ভাবন করেন। তিনি নাটকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও দাউদ পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর তিনি রাজাকারদের সহযোগীদের দ্বারা অপহƒত ও নিহত হন।

কাজী সালমা সুলতানা