সাতক্ষীরায় ইউপি চেয়ারম্যানের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ, কুশপুত্তলিকা দাহ

প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা: খুন, গুম, ধর্ষন, ত্রাণ আত্মসাৎ ও আওয়ামী লীগ নেতা শরবত আলী হত্যাসহ ১৫ মামলার আসামী সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমের ফাঁসি এবং আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে ইউনিয়নবাসী।

আজ বুধবার (২১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২ টার সময় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে  মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিল করে চেয়ারম্যানের কুশপুত্তলিকা দাহ করে ওই ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে খাজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রুহুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহবুদ্দিন সরদার, ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা অশীথ ঘোষ, মাসুদর রহমান প্রিন্স, সিরাজুল ইসলাম, গনেষ মন্ডল, জাকিরুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেন প্রমূখ।

এসময় বক্তরা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমের বাবা মোজাহার উদ্দিন সরকারের গেজেটভূক্ত একজন কুখ্যাত রাজাকার। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শাহনেওয়াজ ডালিমের পিতা মোজাহার উদ্দিন গদাইপুর গ্রামের নওশের আলী সরদারকে মেলেটারি ও রাজাকার ক্যম্পে তুলে নিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে। ইউপি চেয়ারম্যান ডালিমও তার পিতার মত ঘের দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা শরবত মোল্লাকে হত্যা করে। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতা শরবত, টুম্পা ধর্ষন ও হত্যাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে।

এসময় বক্তারা অবিলম্বে সন্ত্রাসী দূর্নীতিবাজ ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমকে গ্রেফতারসহ আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কার এবং মহান স্বাধীনতার বিজয়ের এই মাসে রাজাকার সন্তানকে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষন করেন।

পরে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধ শেষে ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন বিক্ষোভকারীরা। পরে দুপুরে একই দাবিতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিক্ষোভকারীরা।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন খাজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রুহুল কুদ্দুস মোল্লা। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, আশাশুনি উপজেলার সরকারি গেজেটভূক্ত রাজাকারের তালিকায় ১২ নং ক্রমিকে ও সংশোধিত তালিকায় ১৭৬ নং ক্রমিকে ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমের পিতা মোজাহার উদ্দিন সরদারের নাম তালিকাভূক্ত রয়েছে। তার বড় ভাই আব্দুল আলিম আশাশুনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন। তার অপর ভাই জুলফিকার জুলি উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও অপর ভাই আব্দুস সালাম বাচ্চু, উপজেলা বিএনপির কার্য নির্বাহী পরিষদের সদস্য। ১৪ বছর আগে শাহনেওয়াজ ডালিম তার আপন ফুফাত ভাই আশাশুনি উপজেলার চাপড়া গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাশেদ আহম্মেদ খোকার মৎস্য ঘেরের কর্মচারী ছিলেন। ডালিম আপদমস্তক বিএনপি পরিবারের লোক হয়ে স্থানীয় এমপির হাত ধরে ২০০৮-২০০৯ সালে আশাশুনি উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসাবে পদার্পণ করেন। পরবর্তীতে আশাশুনি থানা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও  যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়ে যান।

রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে চাকরী তদবির থেকে শুরু করে টেন্ডারবাজী, ঘের দখল, ঘের মালিক ও সংখ্যালঘু ঘের মালিকদের টাকা আত্মসাৎ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়ে টি.আর, জি.আর, কাবিখা, কাবিটা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ বিভিন্ন ভূয়া তালিকা দিয়ে টাকা উত্তোলন ও আত্মসাৎ এবং বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করে লক্ষ লক্ষ উত্তোনের মাধ্যমেই অল্প দিনেই ফুলে ফেপে কোটিপতি বনে যান রাজাকারপুত্র ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম। চেয়ারম্যান হয়ে ৮ নং খাজরা ইউনিয়নে গড়ে তোলেন নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী।

তিনি আরও জানান, ক্রীড়া সংগঠক গনমূখী ক্লাবের মুক্তির চিংড়ী ঘের লীজ নিয়ে ৩০ বিঘা জমির হারির টাকা পরিশোধ না করে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার বাহিনী কর্তৃক ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুর বিলে মঞ্জুরুল মোল্লার চিংড়ী ঘেরের দুই কর্মচারীকে বেঁধে মাছ লুটের ঘটনায় ডালিমের চেয়ারম্যানের ভাই আহসান হাবিব টগর গদাইপুর মাছের সেটে লুটকৃত মাছ বিক্রি করতে গেলে শরবত মোল্লার সাথে বাকবিতন্ডা হয়। এর জের ধরে চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম ও তার ভাই আহসান হাবিব টগরের নেতৃত্বে লোকজন সংগঠিত করে তার সন্ত্রাসী বাহিনী আওয়ামী লীগ নেতা শরবত মোল্লাকে হত্যা করে। সম্প্রতি খাজরা ইউনিয়নে মুসলমান অধ্যুষিত ৬ নং ওয়ার্ডের চেউটিয়া গ্রামের ১০৮ জন হিন্দু পরিবারের ভূয়া নাম দিয়ে এবং ৪ নং ওয়ার্ডের দেবশিয়া ও পাশ্যেমারি গ্রামের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় মুসলমান পরিবারের ভুয়া তালিকা প্রস্তুত করেন এভাবে ৯টি ওয়ার্ডে ৫৭০০ ব্যক্তির তালিকা প্রস্তুত করেন ভিজিএফ কার্ডের অনুকূলে ৪৫০টাকা হারে লক্ষ লক্ষ টাকা লুটপাট করেন শাহনেওয়াজ ডালিম। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বাধীনতার বিজয়ের এই মাসে একজন দূর্নীতিবাজ বিতর্কিত ব্যক্তির রাজাকারের সন্তানকে আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়ন দিয়ে জাতিকে কলংকিত না করার জন্য আহ্বান জানান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রুহুল কুদ্দুসসহ শত শত এলাকাবাসী।