ফেব্রুয়ারিতে দেশে কভিড টিকাদান কার্যক্রম শুরুর দিকে ৬০ বছর ও এর বেশি বয়সী এবং সম্মুখসারির কর্মীদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর বয়সসীমা ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা হয়। এখন ১৮ বছর বয়সীরা টিকার জন্য নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেন। পাশাপাশি জš§নিবন্ধন আছে এমন ১২ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষার্থীরাও টিকা নিতে পারছে। এতে নিবন্ধন করা ও টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে একধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা নিবন্ধন ও টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। গতকাল একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দেশে ষাটোর্ধ্ব ৩৭ শতাংশ মানুষ টিকাই পাননি। অথচ ষাটোর্ধ্বদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি বলেছে, ষাটোর্ধ্বদের বড় অংশকে অরক্ষিত রেখে বুস্টার ডোজ দিয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে না।
দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। স্বাস্থ্য খাতে আমাদের সাফল্য বহির্বিশ্বের ব্যাপক স্বীকৃতি ও প্রশংসা পেয়েছে। যতই সাফল্য-অর্জন থাকুক, প্রবীণরা সব দেশেই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। দেশে এ ষাটোর্ধ্বদের ৩৭ শতাংশ মানুষ এখনও কভিড টিকার প্রথম ডোজই পাননিÑএমন খবর আমাদের জন্য স্বস্তির নয়, বরং উদ্বেগের। এরই মধ্যে সরকার পূর্ণ দুই ডোজ টিকা পাওয়া এই বয়সীদের তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ দিতে যাচ্ছে। অবশ্যই বুস্টার ডোজ দিতে। পাশাপশি ঝুঁকিতে থাকা প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে কীভাবে টিকাদানের আওতায় আনা যায়, সে লক্ষ্যে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এপিডেমিলজিওকাল রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘তিন সপ্তাহে কভিডে মৃতদের ৬১ শতাংশ ডায়াবেটিস আক্রান্ত ছিল। বৃহস্পতিবার শেয়ার বিজের এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন সপ্তাহে মারা যাওয়া ৭৫ জনের মধ্যে ৪৫ জন ছিলেন কো-মরবিডিটিতে (দুরারোগ্য রোগ) আক্রান্ত।
দেশে ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতায় ঘাটতি রয়েছে। আনুষ্ঠানিক হিসেবে ১৩ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলা হলেও বাস্তবে এ সংখ্যা অনেক বেশি বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আক্রান্ত রোগীদের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষের কোনো লক্ষণ নেই। ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মমতো খাবার গ্রহণ করতে হয়, হাঁটতে হয়। কভিডকালে অনেকের পক্ষে নিয়মিত হাঁটা সম্ভব হয়নি। বাইরে যাওয়া ছিল বারণ। খাবার গ্রহণেও হয় অনিয়ম। ফলে ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে যায় অনেকের। তারা সর্বাপেক্ষা বেশি আছেন কভিডের ঝুঁকিতে, অথচ তারা টিকা নেননি বা পাননি। এর পরিপ্রেক্ষিতে টিকাদানের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে রোগী হƒদরোগ, কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং মুখ, দাঁত, চোখসহ নানা রোগে আক্রান্ত হন। ডায়াবেটিস থাকুক বা না থাকুক, তাদের টিকাদানের আওতায় আনতে হবে।
যারা এক ডোজ টিকা পেয়েছেন, তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি কম; যারা দুই ডোজ পেয়েছেন, তাদের ঝুঁকি আরও কম। তাই বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। বেশি বয়স্ক মানুষ নানা ধরনের রোগে ভোগেন। কভিডে আক্রান্ত হলে তাদের মৃত্যুঝুঁঁকিও বেশি। দেশে ২৮ হাজার ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৫৫ শতাংশই ষাটোর্ধ্ব বয়সী। কিছু মানুষের টিকার প্রতি অনীহা আছে। তারা টিকার জন্য নিবন্ধনও করেন না, টিকা নিতেও আসেন না। তাদের টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জরুরি।