চিলাহাটি-হলিদাবাড়ী রেলপথ নির্মাণব্যয় বাড়ছে ৭৫%

ইসমাইল আলী: ৫৫ বছরের বেশি সময় পর ভারতের হলিদাবাড়ীর সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু করেছে বাংলাদেশ। এজন্য নীলফামারীর চিলাহাটি স্টেশন থেকে ভারত সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ শেষ হয়েছে গত বছর। আর এ রুট দিয়ে গত ২৬ মার্চ পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করা হয়। তবে নির্মাণশেষে এ রুটে পরিকল্পনার ভুল শনাক্ত করেছে রেলওয়ে। তা সংশোধনে প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে নির্মাণব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। নির্মাণকাজে নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্তি ও জমি অধিগ্রহণ দেখিয়ে এ ব্যয় বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এতে নির্মাণব্যয় বাড়বে ৭৫ শতাংশের বেশি।

সূত্রমতে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার চিলাহাটি থেকে চিলাহাটি সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করে। ৮০ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের আওতায় চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে সীমান্ত পর্যন্ত ৯ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মূল রেলপথ ছয় দশমিক ৭২৪ কিলোমিটার আর দুই দশমিক ৩৬ কিলোমিটার লুপ লাইন। অপরদিকে ভারতের হলদিবাড়ী রেলস্টেশন থেকে সীমান্ত পর্যন্ত ছয় দশমিক পাঁচ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপন করেছে ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী এ রুটে যৌথভাবে ঢাকা-জলপাইগুড়ি পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও এ রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। তবে প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এরই মধ্যে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (আরডিপিপি) অনুমোদন করেছে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)। সম্প্রতি আরডিপিপি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) পাঠানো হয়েছে। নতুন হিসেবে রেলপথটির নির্মাণব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৪০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ রেলপথটি নির্মাণব্যয় বাড়ছে ৬০ কোটি ৫২ লাখ টাকা বা ৭৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির আওতায় তিন একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, যদিও প্রাথমিকভাবে এ খাতে কোনো ব্যয় ধরা হয়নি। দ্বিতীয়ত, চিলাহাটি স্টেশন থেকে তিনটি লুপ লাইন নির্মাণের পরিবর্তে চারটি লুপ লাইন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তৃতীয়ত, কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক স্টেশনের আদলে দেড় হাজার বর্গমিটারের একটি স্টেশন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। চতুর্থত, দুটি মাইনর ব্রিজ নতুন করে নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে এবং একটি আইল্যান্ড প্ল্যাটফর্ম নতুন নির্মাণের সংস্থান রাখা হয়েছে।

এর বাইরে বিদ্যমান প্ল্যাটফর্মের উচ্চতা বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের সংস্থান রাখা হয়েছে। ওয়াশপিট ও রেইজড প্ল্যাটফর্ম নির্মাণের সংস্থান রাখা হয়েছে। ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মূল প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) ছিল না। সব মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া প্রকল্পটির সম্ভাব্য সমাপ্তির সময়কাল বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুর রহিম শেয়ার বিজকে বলেন, চিলহাটি-হলিদাবাড়ী রুট দিয়ে পণ্যবাহী ট্রেন উদ্বোধন করা হচ্ছে। আর যাত্রীবাহী ট্রেন উদ্বোধনে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তবে ভারত থেকে যেসব পণ্যবাহী ট্রেন আসে সেগুলো ৪২ গাড়ির। ভবিষ্যতে ৫০ গাড়ির পণ্যবাহী ট্রেনও আসবে, যদিও এজন্য প্রয়োজনীয় জায়গা নেই। তাই নতুন লুপ লাইনটি নির্মাণ করা না হলে কম পরিমাণ পণ্য নিয়ে ট্রেন চালাতে হবে। এজন্য নতুন আরেকটি লুপ লাইন নির্মাণ করতে হচ্ছে বেশি জায়গা নিয়ে। আর এ লুপ লাইনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে এ রুটে শুধু কাস্টম ও ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। কোনো স্টেশন বিল্ডিং ছিল না। তবে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ব্যাংকিং সুবিধাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা রাখার জন্য স্টেশন বিল্ডিং করা হবে। এছাড়া একদিকে প্ল্যাটফর্ম ছিল। তবে দুই দিক থেকে আপ ও ডাউন দুইটি যাত্রীবাহী ট্রেন এলে একটি ট্রেন থেকে নামার কোনো ব্যবস্থা নেই। এজন্য আরেকটি প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ করতে হবে। এতে একটি ফুটওভার ব্রিজও লাগবে। আর ওয়াশপিটও কেন্দ্রীয়ভাবে নির্মাণ করা হবে। সব মিলিয়ে প্রকল্পটি সংশোধন করতে হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ভারতের হলদিবাড়ী ও সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের চিলাহাটির মধ্যে রেল সংযোগ ছিল। ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর এই পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সাল থেকে আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির দিকে বেশি মনোযোগী হয়। এরই অংশ হিসেবে এ রুটটি আবার চালু করা হয়েছে।