বিজয়কেতন

কাজী সালমা সুলতানা: ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭১। এদিন এপিবি পরিবেশিত খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার পরিমাণ ও ব্যাপকতা সম্পর্কে তদন্ত অনুষ্ঠানের জন্য একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম। কমিশন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা যে ক্ষতি করেছে, সে সম্পর্কে তদন্ত এবং বিশেষভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যার ব্যাপারে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ ও একটি সামগ্রিক রিপোর্ট দাখিল করবেন। কমিশনের নেতৃত্ব দেবেন হাইকোর্টের একজন জজ কিংবা অবসরপ্রাপ্ত জজ অথবা জজ হওয়ার যোগ্য কোনো গণ্যমান্য ব্যক্তি।

কলকাতায় এক সরকারি মুখপাত্র জানান, বাংলাদেশে মোতায়েনকৃত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সব ব্যাটালিয়নকে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে ভারতে ফিরিয়ে নেয়া হবে। তিনি বলেন, ১৪ দিনব্যাপী পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রায় ১০০ সদস্য নিহত ও ৫০০ সদস্য আহত হয়। এদিকে নয়াদিল্লির এক খবরে বলা হয়, ভারতের সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল শ্যাম মানেকশ বলেন, ভারতীয় বাহিনীর প্রাথমিক দায়িত্ব ৯৩ হাজার পাকিস্তানি নিয়মিত-অনিয়মিত সৈন্য ও বেসামরিক লোককে বাংলাদেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া। এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন, বর্তমানে পাকিস্তানি বাহিনী গত যুদ্ধের বিপর্যয় সামলিয়ে ওঠার জন্য চেষ্টা করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যুদ্ধবিরতি সীমারেখা বরাবর সদা সতর্ক নজর রাখার জন্য সৈন্যদের প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নয়াদিল্লিতে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতাকালে বলেন, ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না, চায় শান্তিতে বসবাস করতে। তিনি ভারতের প্রতি বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করতে পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শ্রীমতি গান্ধী বলেন, পাকিস্তান-ভারত সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই সাম্প্রতিককালে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, দুদেশের মধ্যে আবার বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, বর্তমানে বাংলাদেশ একটি বাস্তব সত্য। আর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য দায়ী পাকিস্তানি সৈন্যদের বিচারের উদ্দেশ্যে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে কি না, তা বাংলাদেশ সরকারই স্থির করবে।

এদিকে নয়াদিল্লির এক খবরে বলা হয়, ভারতের সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল শ্যাম মানেকশ বলেন, ভারতীয় বাহিনীর প্রাথমিক দায়িত্ব ৯৩ হাজার পাকিস্তানি নিয়মিত-অনিয়মিত সৈন্য ও বেসামরিক লোককে বাংলাদেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া। এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন, বর্তমানে পাকিস্তানি বাহিনী গত যুদ্ধের বিপর্যয় সামলিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যুদ্ধবিরতি সীমারেখা বরাবর সদাসতর্ক নজর রাখার জন্য সৈন্যদের প্রতি আহ্বান জানান।

এদিন মন্ত্রিসভা কেবল পাকিস্তানি ব্যক্তিমালিকানাধীন কলকারখানা ও ব্যবসায়িক সংগঠনকে মালিকানাধীনে আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাঙালি ব্যক্তিমালিকানাধীন শিল্প ও ব্যবসায়িক সংগঠনকে এই সিদ্ধান্তের বাইরে রাখা হয়।

একই দিনে পরিত্যক্ত কলকারখানা আবার সচল করার জন্য নতুন ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত অনুসারে দেশের সব পরিত্যক্ত শিল্প ইউনিটকে মোট ছয় অঞ্চলে ভাগ করে প্রতিটি ইউনিটের পরিচালনার জন্য শিল্প দপ্তরের উপপরিচালক বা সহকারী পরিচালক, ঋণদানকারী ব্যাংকের প্রতিনিধি, মিল ব্যবস্থাপক, রেজিস্ট্রিকৃত শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এবং সরকার মনোনীত আরেকজন সদস্যের সমবায়ে মোট পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠনের ব্যবস্থা ঘোষিত হয়। এসব ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে স্পষ্টতই কোনো রাজনৈতিক দল বা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব করার প্রয়াস ছিল না। এদিন মন্ত্রিসভা ব্যাংকগুলোর প্রশাসক নিযুক্ত করে।

তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও মূলধারা ৭১