দুই বছরেও চালু হয়নি নোবিপ্রবির ভাষা শহীদ আবদুস সালাম হল

আব্দুল কবীর ফারহান, নোবিপ্রবি: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) পাঁচটি আবাসিক হলের দুটিই বন্ধ রয়েছে। বন্ধ হল দুটির একটি এখনও উদ্বোধনের অপেক্ষায়। সংস্কার কাজ শেষ হলেও শিক্ষার্থীদের অন্যটিতে তুলতে গড়িমসি করছে প্রশাসন।

করোনাকালে ছুটি-পরবর্তী তিনটি হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এখনও চালুই করেনি কর্তৃপক্ষ। আর ভাষা শহীদ আবদুস সালাম দুই বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এ হলের সংস্কার শেষ হলেও শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে পারছে না। ফলে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীকে শহরের বিভিন্ন মেসে থাকতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতে সময়ও বেশি ব্যয় হচ্ছে। এ হলের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলের সংস্কারকাজ সম্পন্ন হলেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের হলে উঠতে দিচ্ছে না।

জানা যায়, ২০১৯ সালের শেষদিকে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ব্যাপক ভাঙচুর হয় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ভাষা শহীদ আবদুস সালাম হলে। এ ঘটনায় আবাসিক শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য হল বন্ধ করে দেয় হল প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুই বছর সময় নিয়ে হলটির সংস্কারকাজ সম্পন্ন করা হয়। এ বছর অক্টোবর মাসে সংস্কার কাজ শেষ হওয়ায় প্রশাসনকে হলটি বুঝিয়ে দেয়া হয়। সূত্র জানায়, ভাঙচুরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় এর সংস্কার কাজে তিন ধাপে প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

করোনা-পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রায় এক মাস আগে নোবিপ্রবির অন্য তিনটি আবাসিক হল চালু করে শিক্ষার্থীদের হলে ওঠার অনুমতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে আব্দুল মালেক উকিল হল, হযরত বিবি খাদীজা হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলÑএই তিনটি হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা হলে থাকা শুরু করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য দুই হলের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নির্মাণ ও সংস্কারকাজ সম্পন্ন হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়নি। এ হলের কাজ সম্পন্ন করা হলেও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা পুরোপুরি না হওয়ায় হলটি চালু হচ্ছে না।

এ বিষয়ে হলের প্রভোস্ট মো. মজনুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের হলে তোলার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা সম্পন্ন করে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই হলটি চালু করা হবে।

অন্যদিকে ভাষা শহীদ আবদুস সালাম হলের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর দুই মাসের অধিক সময় পেরোলেও এখনও শিক্ষার্থীদের হলে তোলা হয়নি। এরই মধ্যে এক মাস আগে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করে ভাইবা সম্পন্ন করেছে হল প্রশাসন।

ভাইবা দিয়ে হল প্রশাসন কর্তৃক দীর্ঘ সময় ক্ষেপণের কারণে বিপাকে রয়েছে এ হলের জন্য আবেদন করা  প্রায় এক হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী। তাদের মতে, হলের সিটের ফলাফল না দেয়ায় তারা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছেন এই শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, হলের সিট পেলে তারা নতুন মেস নেয়া থেকে বিরত থাকতেন। আর হলে সিট না পেলে দ্রুত ভিন্ন ব্যবস্থা করে তারা দোদুল্যমান অবস্থা থেকে বের হতে পারতেন।

এদিকে এ হলের কাজ শেষ হওয়ার দুই মাস হলেও শিক্ষার্থী না থাকায় নতুন সংস্কার করার পর হলে চুরির ঘটনা ঘটছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়।

সূত্র জানায়, হল খালি থাকায় বাইরে থাকা বিভিন্ন জিনিস হল থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে।

হল চালু করার বিষয়ে জানতে চাইলে সালাম হলের প্রভোস্ট ড. আনিসুজ্জামান রিমন ফোনকলে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তার কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম বলেন, খুব দ্রুত শিক্ষার্থীদের তুলে দিয়ে হল আবার চালু করা হবে। তিনি আরও বলেন, ভাইবার পর স্বল্প সময়ের মধ্যে ফলাফল দিয়ে হলেও শিক্ষার্থীদের তোলার পরিকল্পনা ছিল। কেন দেরি হচ্ছে, বিষয়টি জেনে দ্রুত চালু করার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।