অধিকাংশ সিমেন্ট কোম্পানির নিট মুনাফা ৫ শতাংশের কম

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: কভিড সংক্রমণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় বিদায়ী অর্থবছরে দেশীয় সিমেন্ট উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে কোম্পানিগুলোর বিপণন ও প্রশাসনিক খরচও বেড়েছে। পাশাপাশি নির্মাণসামগ্রীর দাম বেশি থাকায় বাজারের চাহিদাও কিছুটা কম ছিল। এসব কারণে অধিকাংশ সিমেন্ট কোম্পানির বিক্রয় রাজস্বের তুলনায় নিট মুনাফা কম হয়েছে। তবে কোম্পানিগুলোর বিক্রি আগের চেয়েও বেড়েছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের কোম্পানি মেঘনা সিমেন্ট লিমিটেড। কোম্পানিটি গত ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট সিমেন্ট উৎপাদন করে ১৫ লাখ ৬৪ হাজার ৬২৯ মেট্রিক টন। বিক্রি করে ১৫ লাখ ৭২ হাজার ৯৮২ মেট্রিক টন। মোট বিক্রয় রাজস্ব ছিল ৯৬৫ কোটি টাকা। এতে পরিচলন মুনাফা হয়েছে ৪৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, যেখানে নিট মুনাফা হয়েছে সাত কোটি ৪৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিক্রির এক শতাংশেরও কম হয়েছে নিট মুনাফা, যা আগের অর্থবছরের ছিল পাঁচ কোটি ২০ লাখ টাকা। যদিও তখন সিমেন্ট উৎপাদন করেছিল ১১ লাখ ৪৭ হাজার ৮১২ মেট্রিক টন। বিক্রি করেছিল ১১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন। মোট বিক্রয় রাজস্ব ছিল ৭৭৩ কোটি টাকা। এতে পরিচলন মুনাফা করেছিল ৫১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

শুধু মেঘনা সিমেন্ট নয়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেডের বিক্রয় রাজস্ব ছিল এক হাজার ২৮১ কোটি টাকা। এতে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছিল ৬১ কোটি টাকা, যা বিক্রির চার দশমিক ৮০ শতাংশ। একই সময়ে এমআই সিমেন্টের বিক্রয় রাজস্ব ছিল এক হাজার ৩১ কোটি টাকা। আর নিট মুনাফা ছিল ৮৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা, অর্থাৎ বিক্রির পাঁচ দশমিক ২৬ শতাংশ। এছাড়া আরামিট সিমেন্টের বিক্রি ছিল ২০১ কোটি টাকা। আর নিট মুনাফা হয়েছিল দুই কোটি দুই লাখ টাকা, যা বিক্রয় রাজস্বের এক শতাংশ মুনাফা।

জানা যায়, বিশ্বে বাংলাদেশ ৪০তম বৃহত্তম সিমেন্ট উৎপাদনকারী দেশ। দেশে মোট ১২৫ সিমেন্ট কারখানা থাকলেও ৩৩টি সিমেন্ট কোম্পানি সক্রিয় রয়েছে। সম্মিলিত উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় পাঁচ কোটি মেট্রিক টন। এর মধ্যে কার্যকরী ক্ষমতা চার কোটি মেট্রিক টন। তবে দেশের সিমেন্টের বাজারে ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে করছে আবুল খায়ের গ্রুপের শাহ্ সিমেন্ট, বসুন্ধরা গ্রুপের মেঘনা ও বসুন্ধরা সিমেন্ট, সেভেন রিংস ব্র্যান্ডের সিমেন্ট, মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ সিমেন্ট, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, ক্রাউন ব্র্যান্ডের এমআই সিমেন্ট, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট প্রভৃতি। এছাড়া আকিজ সিমেন্ট, মদিনা সিমেন্ট, কনফিডেন্স সিমেন্ট, আরামিট সিমেন্ট, রয়েল, ডায়ামন্ড, আমান সিমেন্ট, মোংলা সিমেন্ট, আকিজ সিমেন্ট, আনোয়ার সিমেন্ট, এআর সিমেন্ট, দেশবন্ধু সিমেন্ট, এস আলম সিমেন্ট, আল্ট্রাটেক সিমেন্ট, এনজিএস মিসেন্ট, নয়াপাড়া সিমেন্ট, অ্যাংকর ব্র্যান্ডের অলিম্পিক সিমেন্ট, মেট্টোসেম, দুবাই বাংলা সিমেন্ট, ইমিরেটস সিমেন্ট, সিয়াম সিটি সিমেন্ট ও সেনাকল্যাণ সংস্থার মোংলা সিমেন্ট কোম্পানি, বেঙ্গল সিমেন্ট, ইস্টার্ন সিমেন্ট, যশোর সিমেন্ট প্রভৃতি কোম্পানিগুলোর বাকি ২০ শতাংশ বাজার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রেখেছে।

সিমেন্টশিল্প-সংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশে মাথাপিছু সিমেন্টের ব্যবহার ১২৫ কেজি। ভারতে মাথাপিছু সিমেন্টের ব্যবহার ২২৫ কেজি। পাকিস্তানে ১২৯ কেজি। মাথাপিছু সিমেন্টের ব্যবহারের দিক থেকে শীর্ষে সৌদি আরব। দেশটিতে মাথাপিছু সিমেন্টের ব্যবহার প্রায় এক হাজার ৭০০ কেজি। আর বিশ্বে সিমেন্টের মাথাপিছু গড় ব্যবহার ৫০০ কেজি। ফলে বাংলাদেশের এ খাতের প্রবৃদ্ধির অনেক সুযোগ রয়েছে।

তারা জানান, সিমেন্টশিল্পের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ক্লিংকার, স্ল্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ, চুনাপাথর এবং জিপসামের মতো কাঁচামালের আকাশছোঁয়া দাম। ফলে কোম্পানির মার্জিন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া কার্গো জাহাজ ভাড়া ও কনটেইনার ভাড়া বেড়েছে আড়াইগুণের বেশি। এছাড়া আয়কর অধ্যাদেশের ৮২সি ধারার প্রভাব এবং মূসক ও অগ্রিম আয়কর আরোরে ফল কোম্পানিগুলোর ব্যয়ও বেড়েছে।

এ বিষয়ে প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, কভিডের কারণে সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া কাঁচামালের দর বৃদ্ধি, জাহাজভাড়া, অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতিযোগিতার কারণে প্রায় সব কোম্পানির মুনাফা কমেছে। তবে আগের বছরের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে।