ছাত্রলীগের চার নেতা আজীবন বহিষ্কার

প্রতিনিধি, খুলনা : খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) এক শিক্ষকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ চার শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কৃত অন্যরা হলেন আবু হাসান আব্দুল কাইয়ুম, মো. কামরুজ্জামান রাজ্জাক ও রিয়াজ খান নিলয়। এছাড়া আরও সাতজনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার কুয়েট সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

কুয়েট পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) অধ্যাপক ইসমাইল সাইফুল্লাহ বলেন, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভায় কুয়েট শিক্ষক অধ্যাপক সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৪৪ শিক্ষার্থীর শোকজের জবাব এবং ৪৪ পৃষ্ঠার তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সভায় জমা দেয়া হয়।

কমিটির সভাপতি ও কুয়েট ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩০ নভেম্বর বিকালে কুয়েটের ইইই বিভাগের অধ্যাপক সেলিম হোসেন মারা যান। তার মৃত্যুর পর সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে এ মৃত্যুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ তার অনুগত ছাত্ররা দায়ী। তার পরিবারও একই অভিযোগ করে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের লালনশাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে অধ্যাপক সেলিমকে চাপ দিয়ে আসছিলেন ফজলুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন বেলা সাড়ে ১২টায় সেজানের নেতৃত্বাধীন কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের রাস্তায় অধ্যাপক সেলিমকে জেরা করেন। পরে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করেন।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধা ঘণ্টা শিক্ষকের রুমে অবস্থান করেন। পরে কক্ষ থেকে বেরিয়ে অধ্যাপক সেলিম দুপুরের খাবার খেতে ক্যাম্পাস থেকে নিজ বাসায় যান। দুপুর আড়াইটার দিকে তার স্ত্রী লক্ষ করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনা তদন্তে দুই দফায় কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

অপরদিকে এ মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবিসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত ২ ডিসেম্বর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধসহ দায়ী ছাত্রদের শাস্তির দাবি জানান শিক্ষকরা। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি দুই দফা বাড়িয়ে ৭ জানুয়ারি হল এবং ৯ জানুয়ারি ক্লাস শুরুর ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন।