মৌ চাষে সফল নাটোরের বাবুল

প্রতিনিধি, সিংড়া (নাটোর): সাত বছর আগের কথা। তখন ৫৫ বছর বয়সী বাবুল ছিলেন পেশায় একজন গ্রাম্য চিকিৎসক। সবাই ডাকতেন বাবুল ডাক্তার নামে। সাত বছরের ব্যবধানে তার নাম হয়েছে মৌচাষি বাবুল। পদবির এ পরিবর্তন এনে দিয়েছে মৌচাষ করে। মেধা, শ্রম আর সময় কাজে লাগিয়ে বাবুল এখন সফল মৌচাষি হিসেবে এলাকায় পরিচিত পেয়েছেন। এলাকায় এখন আর কেউ বাবুল ডাক্তার নামে ডাকেন না। সবাই মধু বাবুল নামে ডাকে ও চেনে।

সরষের মৌসুমসহ বছরের সাত মাসে প্রায় ১০০ মণ মধু সংগ্রহ করেন মৌচাষি বাবুল। এর মধ্যে সরষে থেকে মধু সংগ্রহ হয় প্রায় ৪০ মণ। এতে খরচ বাদে বছরে তার আয় হয় সাত লাখ থেকে আট লাখ টাকা।

এক সময় গ্রামে চিকিৎসা করে কোনো রকম সংসার চালানো সেই বাবুল আজ স্বাবলম্বী একজন মানুষ। মৌচাষি এ বাবুলের বাড়ি নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশভাগ গ্রামে। সিংড়া উপজেলার ডাকমুণ্ডপ বাজারে আছে তার মৌ খামার। খামারে আছে ৬০টি মৌবাক্স। খামারে কাজ করেন চারজন কর্মচারী।

মৌচাষি বাবুল জানান, বছরে সাত মাস মধু সংগ্রহ করা গেলেও অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ এ তিন মাস সরষে থেকে তার সবচেয়ে বেশি মধু সংগ্রহ হয়। সরষের মৌসুম শেষে বাকি চার মাস তিনি ধনিয়া, কালোজিরা ও লিচু থেকে মধু সংগ্রহ করেন। সংগৃহীত এ মধু অনলাইনের মাধ্যমে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বিক্রয় করেন তিনি।

শুরুটা কীভাবে হয়েছিল জানতে চাইলে মৌচাষি বাবুল বলেন, ২০১৪ সালে নাটোর কৃষি মেলায় গিয়ে মৌচাষ প্রশিক্ষণের ওপর নাটোর বিসিকের একটি নিয়োগ দেখি। এরপর যোগাযোগ করে সেখানে ১৫ দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করি মৌচাষ। পরে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ নেই। এখন আমি মৌচাষের পাশাপাশি বিসিকের একজন ট্রেইনার হিসেবেও কাজ করছি। মাত্র সাত বছরে মৌচাষে একজন সফল মানুষ বাবুল। তিন ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। নাটোর শহরে জায়গা কিনেছেন। গ্রামের বাড়িতে কিনেছেন ধানী জমি। সব মিলে সচ্ছল সংসার মৌচাষি বাবুলের। বাবুলের এমন সফলতার সুনাম দেখে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে অনেকেই এগিয়ে আসছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. সেলিম রেজা বলেন, সিংড়া উপজেলায় সরষে ক্ষেতে ২৪৯টি মৌবাক্স স্থাপন করে মৌচাষিরা মধু সংগ্রহ করছেন। এ বছর প্রথমবারের মতো কৃষি অফিস থেকে আমরা ১০ জন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কৃষককে আধুনিক মৌবাক্স দিয়েছি। সরষের এ সময়ে মধু সংগ্রহ করে কৃষকরা বাড়তি আয় করছেন। আমরা তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি। আশা করছি আগামীতে এই এলাকায় সরষে আবাদের পাশাপাশি মৌচাষির সংখ্যাও বাড়বে।