সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) গত পাঁচ বছরের গ্যাস সরবরাহ সক্ষমতা বাড়েনি এক শতাংশও। অথচ এ সময়ে কোম্পানিটি ২ লাখ ৩২ হাজার ৩৭১টি নতুন সংযোগ দিয়েছে। অর্থাৎ এ সময়ে প্রায় ৬৩ শতাংশ গ্রাহক বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রতিদিন লক্ষাধিক গ্রাহক গ্যাস সংকটে বিপাকে পড়েন। গ্রাহকদের গ্যাস কম দিয়ে ও সক্ষমতা না থাকার পরও অতিরিক্ত সংযোগ দিয়ে অবৈধভাবে মুনাফা অর্জনের অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
সূত্রমতে, ২০১১-১২ অর্থবছরের গ্যাস বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান কেজিডিসিএল বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহকের তৎকালীন সময়ে চাহিদা ছিল দৈনিক ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর সরবরাহ করতে পারত ২২৩ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে দৈনিক ঘাটতি ছিল ১৭৭ মিলিয়ন ঘনফুট। আর পাঁচ পর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের গ্রাহকের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর সংস্থাটি সরবরাহ করতে পারে দৈনিক ২৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে দৈনিক গ্যাসের ঘাটতি থাকে ২১০ মিলিয়ন ঘনফুট। সময়ের ব্যবধানে গ্যাস সরবরাহ ঘাটতি বাড়লেও থেমে নেই সংস্থাটির সংযোগের সংখ্যা। আর সংযোগ বাড়লেও বাড়ে না গ্যাসের চাহিদা। যদিও বিতর্ক আছে সংস্থাটির বর্তমান গ্যাসের চাহিদা নিরূপণ ও নির্ধারণ প্রক্রিয়া নিয়ে।
সংস্থাটির প্রতিবেদন মতে, ২০১১ সালে ৩০ জুন পর্যন্ত এ কোম্পানির শিল্প, বাণিজ্যিক, আবাসিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রমপুঞ্জিত গ্রাহক সংযোগ ছিল মোট ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৭০৩টি। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৬৩৪-তে। তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের নতুন এক লাখ ২ হাজার ৮৯৯টি নতুন সংযোগ দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে বছর শেষে ক্রমপুঞ্জিত গ্রাহক সংযোগ দাঁড়ায় মোট ৪ লাখ ৭২ হাজার ৯৯১টি। এছাড়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ৬০ হাজর ৬৭১টি সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে বছর শেষে ক্রমপুঞ্জিত গ্রাহক সংযোগ দাঁড়ায় মোট ৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৫৮টি। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ৩৬ হাজার ৮১৬টি সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে বছর শেষে ক্রমপুঞ্জিত গ্রাহক সংযোগ দাঁড়ায় মোট ৬ লাখ দুই লাখ ৭৪টি।
এদিকে চলতি বছরে সরকারিভাবে গ্যাস সংযোগ বন্ধ ঘোষণা থাকার কারণে এ বছর নতুন সংযোগ দিতে পারেনি কেজিডিসিএল। যদিও চলতি বছরের সংস্থাটির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪ হাজারেরও অধিক।
বিশেষজ্ঞ ও গ্রাহকদের অভিযোগ, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গ্রাহকদের গ্যাস কম দিয়ে ও সক্ষমতা না থাকার পরও অতিরিক্ত সংযোগ দিয়ে অবৈধভাবে মুনাফা অর্জনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর অতিরিক্ত সংযোগে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কখনো বিতরণে রেশনিং বা স্ট্যাগারিং করা হলেও তার চেয়ে বেশি গ্যাসের প্রেশার কমিয়ে কিংবা কোনো অঞ্চলে কয়েক ঘণ্টা সরবরাহ বন্ধ করে রাখা হয়। ফলে কেজিডিসিএল প্রতিবছর গ্যাস কেনার চেয়ে বেশি বিক্রি করছে। এতে গত পাঁচ বছরের গ্যাস কেনার চেয়ে অতিরিক্ত বিক্রির পরিমাণ ছিল মোট ৮৬৫ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট। আর গড়ে প্রতি ঘনফুটের দাম ৭ টাকা ৪২ পয়সা হিসাব করলে এ অতিরিক্ত বিক্রির মুনাফা হয় ৬৪২ কোটি ৩১ লাখ ২৩ হাজার টাকা, যা সংস্থাটির এক বছরের অর্জিত নিট মুনাফার চেয়েও বেশি। অথচ গ্রাহকরা ন্যায্য সরবরাহ না পেয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এক্ষেত্রে আবাসিকের গ্রাহকরা ভোগান্তিতে বেশি পড়ছে। অথচ গ্রাহকরা তাদের নির্ধারিত বিল পরিশোধ করছে।
চট্টগ্রামের কেজিডিসিএলের একাধিক গ্রাহক শেয়ার বিজকে বলেন, প্রয়োজনে অনেক সময় গ্যাস পায় না। অনেকটা বাধ্য হয়ে বিকল্প উপায়ে রান্নার কাজ করতে হয় কিংবা দোকান থেকে খাবার কিনে আনতে হয়। শীতকালে তো প্রকট আকার ধারণার করে গ্যাস সংকট। অথচ প্রতি মাসে নির্ধারিত বিল পরিশোধ করে আসছি।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ক্রয়ের চেয়ে বিক্রি বেশি বিস্ময়কর। মুনাফাও করছে বেশি। আর সরবরাহ সক্ষমতা না থাকার পরও নতুন নতুন সংযোগ দিয়ে গ্যাস সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। আমরা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে তো মানসম্মত গ্যাস পাচ্ছি না। এ কারণে তো অনেক মূলধনি যন্ত্রপাতিও নষ্ট হচ্ছে। গ্যাসের অভাবে অনেক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইয়ুব খান শেয়ার বিজকে বলেন, সংযোগ প্রদানের সংখ্যা সঠিক নাও হতে পারে। পাঁচ বছরের সংযোগ প্রদানের সংখ্যা এত বেশি হবে না। পরে তিনি এ বিষয়ে জিএম’র (অর্থ হিসাব এবং বিপণন) সঙ্গে কথা বলার জন্য বলেন।
কেজিডিসিএলের জিএম (অর্থ ও হিসাব) ফারুক আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, আমার কাছে কোনো ধরনের তথ্য নেই। আমি তথ্য দেওয়ার কেউ নই। আর এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকই ভালো জানেন।
উল্লেখ্য, বৃহত্তর চট্টগ্রামে গ্যাস বিতরণের লক্ষ্যে ২০১০ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি (কোম্পানি অ্যাক্ট ১৯১৩) হিসেবে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গঠিত হয়। আর গ্যাস ক্রয়, বিক্রয় ও বিতরণ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে একই বছরের মে মাসে।