রবিউল আউয়াল রবি, ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় বাসাবাড়িতে গ্যাস সংকট বেড়েই চলছে। সংকট বেড়ে যাওয়ায় শীত মৌসুমে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন আবাসিক গ্রাহকেরা। দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গড়ে এক ঘণ্টাও গ্যাস থাকে না বাসাবাড়িতে। বাধ্য হয়ে রান্নার কাজ সারতে হচ্ছে সিলিন্ডার গ্যাস কিংবা লাকড়ির চুলায়। মুক্তাগাছায় গ্যাসের এমন দুরবস্থা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। এলাকাবাসীর অভিযোগÑকর্তৃপক্ষের কাছে বারবার অভিযোগ জানালেও মিলছে না কোনো প্রতিকার। পৌর এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা হলে সবাই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সবকটি ওয়ার্ডে গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করায় দিনভর এসব এলাকার বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
অপরদিকে এলাকার বাসিন্দারা বিভিন্ন সময় গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জরুরি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। মাস পেরিয়ে বছর গড়িয়ে গেলেও সংকট সমাধানে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পৌর শহরের লক্ষ্মীখোলা, নন্দীবাড়ী, পাড়াটঙ্গী, মনিরাম বাড়ি ও পয়ারকান্দি এলাকায় বেশিরভাগ সময় চুলায় গ্যাস পাওয়া যায় না। সকাল ৭টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত কোথাও বিকাল ৩টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। সকালে কোনো রকম রান্নাবান্না করতে পারলেও দুপুরের পর থেকেই করুণ অবস্থা তৈরি হয়। কোথাও কোথাও আবার রাত জেগে রান্না করতে হয়, আবার দিনের বেলায় কেরোসিন তেল দিয়ে স্টোভ জ্বালিয়ে, কখনও বা সিলিন্ডারের চুলায় তা গরম করে খেতে হচ্ছে। আবার কোথাও সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গ্যাসের চুলাই জ্বলে না। অধিকাংশ সময় গ্যাস না থাকায় রান্নায় গৃহিণীদের এখন শেষ ভরসা সিলিন্ডার ও মাটির চুলা। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগÑগ্যাস সংকট তীব্র হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ।
পৌরশহরের বাসিন্দা গৃহিণী নাজনীন সুলতানা অভিযোগ করে বলেন, রাতের কোনো এক সময় কিছু সময়ের জন্য গ্যাস পাওয়া গেলেও চাপ না থাকায় চুলা জ্বলে না। বাধ্য হয়েই সিলিন্ডার কিনে রান্না করতে হচ্ছে। এতে করে খরচ দ্বিগুণ লাগছে। একদিকে প্রতি মাসে গ্যাস না পেয়েও গ্যাসের বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে, অপর দিকে মাসে দুটি করে সিলিন্ডার গ্যাস লাগছে রান্নার কাজে।
একই ধরনের অভিযোগ করেন ঈশ্বরগ্রামের রওশনারা। তিনি বলেন, গ্যাসের সংকটের কারণে সময়মতো রান্নার কাজ সারতে পারি না। গ্যাসের অপেক্ষায় না থেকে বাধ্য হয়েই লাকড়ির চুলা দিয়েই রান্না করতে হয়।
পয়ারকান্দি এলাকার গৃহিণী চম্পা বেগম বলেন, গ্যাসের অভাবে সিলিন্ডার ব্যবহার করে রান্নার কাজ চালাতে হচ্ছে। প্রতিমাসে দু-তিনটি সিলিন্ডার লাগে। সত?্য কথা বলতে, বাচ্চা নিয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে সিলিন্ডার ব্যবহার করে রান্না করছি।
পাড়াটঙ্গী এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী ফাতেমা খাতুন শিখা বলেন, ভোররাতে কোনো রকমে দায়সারাভাবে গ্যাস দেয়া হলেও চাপ থাকে না একদম। এতে রান্না করা তো দূরের কথা ম্যাচের কাঠি দিলে চুলায় আগুন পর্যন্ত জ্বলে না। এভাবে আর কত দিন গ্যাসের কষ্ট করতে হবে তা জানি না। অথচ মাসের বিল মাসেই পরিশোধ করতে হয়।
মুক্তাগাছা বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, গ্যাসের সমস্যার কথা বলে লাভ নেই। গ্যাস নিয়ে এখন আমাদের সঙ্গে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তামাশা করছে।
প্রবীণ কবি ও সাংবাদিক সাইফুজ্জামান দুদু শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের মুক্তাগাছায় গ্যাস সমস্যা দীর্ঘদিনের, এ সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
গ্যাসের সংকট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিতাসের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম শেয়ার বিজকে জানান, চাহিদা অনুযায়ী বর্তমানে মুক্তাগাছা লাইনে গ্যাস কম সরবরাহ হচ্ছে, তাই গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। আশা করি মাস খানেকের মধ্যে এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে।