জুনায়েদ আহম্মেদ, লক্ষ্মীপুর: সত্তর বছর বয়সী জিয়াউল হক। স্বপ্ন দেখেন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি আÍনির্ভরশীল হওয়ার। এ প্রত্যয়ে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে প্রায় ৩০০ শতক জমিতে গড়ে তোলেন বরই বাগান। আর তা থেকে এখন বছরে কোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। তার বাগানে কাশ্মীরি আপেল কুল এবং অস্ট্রেলিয়ান আপেল কুল নামে দুই জাতের বরই চাষে অনেকটা সফলও হয়েছেন এ আÍপ্রত্যয়ী জিয়াউল হক।
জিয়াউল হক লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের সাইছা গ্রামের বাসিন্দা। তিন কন্যাসন্তানের বাবা জিয়াউল এ বয়সে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইউটিউবে বরই বাগান দেখে তাতে উদ্বুদ্ধ হন। সম্প্রতি বরই বাগানে গিয়ে কথা হয় এ জিয়াউল হকের সঙ্গে।
এ সময় জিয়াউল হক জানালেন, সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে গাছে বরই আসে। কিন্তু তার বাগানে বরই ফলন শুরু হয় অগ্রহায়ণ মাস থেকে। মাত্র এক বছর তিন মাস বয়সের বাগান তার। গত নভেম্বর মাস থেকে প্রতিদিন ২০০-৩০০ কেজি বরই পাইকারি বিক্রি করছেন ১২০-১৩০ টাকা দরে। বর্তমানে দৈনিক বিক্রি উপযোগী হচ্ছে প্রায় ৫০০ কেজি। তিনি আশা প্রকাশ করেন এ মাসে উৎপাদন পৌঁছাবে প্রতিদিন হাজার কেজিতে। এ রকম চলতে থাকলে এ বছর কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা এবং আগামী বছর থেকে কোটি টাকা আয় করবেন বলে ধারণা করছেন তিনি।

তিনি আরও জানান, নিজের চাষযোগ্য কোনো জমি না থাকায় নিজ এলাকা ছেড়ে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে এক বন্ধুর ৩০০ শতক জমি লিজ নেন তিনি। পরে ফরিদপুর ও বগুড়া থেকে চারা সংগ্রহ করে গড়ে তোলেন বরই বাগান। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের দিকে বাগানে বরই গাছ লাগান। মাত্র ১৫ মাসের মাথায় তার দুই হাজার গাছেই বরই ফলন শুরু হয়েছে। পুরো বাগান এখন বরইতে ভরপুর।
প্রতিদিন দুই শ্রমিকসহ তিনি নিজে বরই সংগ্রহ করেন। বিকালে সেগুলো তার নিজস্ব পিকআপ ভ্যানে করে লক্ষ্মীপুর জেলা শহর, ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী ও শ্যামবাজারে পাঠান।
বরই চাষে জড়িয়ে পড়ার গল্প বলতে গিয়ে জিয়াউল হক বলেন, তিনি ব্যবসা করতেন। যুবক বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও ফিরে আসেন। পরে ২০১১ সালের দিকে নিজ এলাকা রায়পুরে সাত একর জমিতে বাউকুলের বাগান করে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হন, কিন্তু তিনি দমে যাননি। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এ বয়সেও ইউটিউব সার্চ করে আগাম জাতের বরই চাষের কলাকৌশল শিখে নেন। পরে এক বন্ধুর জমি লিজ নিয়ে গড়ে তোলেন বরই বাগান। তার বাগানে রয়েছে কাশ্মীরি আপেল কুল এবং অস্ট্রেলিয়ান আপেলকুল নামে দুই জাতের বরই।
এছাড়া বরই বাগানের পাশে এ বছর তিনি আরও একটি জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শজনে গাছের বাগান করার স্বপ্ন দেখছেন ৭০ বছর বয়সী জিয়াউল হক।
চরমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউছূপ আলী মিয়া বলেন, জিয়াউল হকের বরইয়ের বাগান দেখে আমার নিজেরও লোভ লেগে গেছে। আমিও এ রকম একটা বাগান দেয়ার স্বপ্ন দেখছি। তিনি আশা করছেন, তার এ উদ্যোগ দেখে এ অঞ্চলে বরই বাগান ছড়িয়ে পড়বে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন জানান, জিয়াউল হকের বরই বাগানটির কথা তিনি শুনেছেন। শিগগিরই জেলা কৃষি বিভাগ বাগানটির খোঁজ-খবর নিয়ে এবং জিয়াউল হকের অভিজ্ঞতা নিয়ে বরই আবাদে অন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করবে।