সাবএরাকনয়েড হেমোরেজ

সাবএরাকনয়েড হেমোরেজ হলো মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ একধরনের রক্তক্ষরণ, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাথার আঘাতের কারণে হয়ে থাকে। আঘাত ছাড়াও এটি মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজমের কারণেও হয়। অ্যানিউরিজম হলো মস্তিষ্কের ধমনির একটি বেলুনিং বা ফোলা অংশ, যা আকস্মিক ফেটে গিয়ে রক্তপাত ঘটায়।

রক্তপাতের ঘটনা ঘটলে সাধারণত যেসব উপসর্গ দেখা দেয়, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো হঠাৎ মারাত্মক মাথাব্যথা শুরু হওয়া। রোগীদের অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে খারাপ মাথাব্যথা হিসেবে এটিকে বর্ণনা করা হয়। মানে এত প্রচণ্ড মাথাব্যথা তারা আর কখনও অনুভব করেননি। তবে কখনও কখনও লোকে রক্তক্ষরণের আগে মাথার মধ্যে একটি হালকা ব্যথা অনুভব করতে পারেন, যা ক্রমেই বাড়তে থাকে।

আরও উপসর্গ থাকতে পারে। যেমন ঘাড়ব্যথা, শরীরে অসারতা, কাঁধে ব্যথা, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, একটি জিনিসকে দুটি দেখা বা ডাবল ভিশন, বমি-বমি ভাব, খিঁচুনি ও বিভ্রান্তি।

সাবএরাকনয়েড হেমোরেজের লক্ষণগুলো হঠাৎ করেই দেখা দেয় এবং রোগী প্রচণ্ড মাথাব্যথা অনুভব করার পর হঠাৎ জ্ঞান হারাতে পারেন। এ রকম ঘটলে অবিলম্বে জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সাবএরাকনয়েড হেমোরেজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটতে পারে বা হতে পারে মাথার আঘাতের কারণে। যদি এটি স্বতঃস্ফূর্ত হয়, তবে এটি মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজমের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। আগেই বলা হয়েছে, অ্যানিউরিজম হলো মস্তিষ্কের ধমনির একধরনের অস্বাভাবিকতা।

যখন একটি অ্যানিউরিজম বিস্ফোরিত হয়, তখন দ্রুত রক্তপাত হয় আর মস্তিষ্কের মধ্যে একটি জমাট রক্ত তৈরি হয়। এই ব্রেন অ্যানিউরিজম নারীদের বেশি দেখা যায়, অনেকের জš§গতভাবেই থাকে।

তীব্র মাথাব্যথা, খিঁচুনি, দৃষ্টি সমস্যা বা আকস্মিক জ্ঞান হারানো রোগীর ঘাড় শক্ত দেখলে চিকিৎসক সাবএরাকনয়েড হেমোরেজ হয়েছে বলে সন্দেহ করে থাকেন। দ্রুততম সময়ে মাথার সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করা হলে রোগ নির্ণয় করা সহজ হয়। ট্রান্সক্র্যানিয়াল আলট্রাসাউন্ড মস্তিষ্কের ধমনিতে রক্তপ্রবাহ শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে। সেরিব্রাল এনজিওগ্রাফি স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ শনাক্ত করার জন্য ব্যবহƒত হয়।

রোগীর জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি মস্তিষ্কের ক্ষতির মাত্রা কমাতে প্রাথমিক চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ। আগে রক্তপাতের কারণ চিহ্নিত করার পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসা করা প্রয়োজন। ক্লিপিং করে অ্যানিউরিজম বন্ধ করতে এবং ভবিষ্যতে রক্তপাতের ঝুঁকি কমাতে অস্ত্রোপচার দরকার হয়। এর বাইরে সতর্কভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, খিঁচুনি প্রতিরোধক ও মাথাব্যথার উপশমকারী দরকার হয়। চিকিৎসার পরও রোগী জটিলতার ঝুঁকিতে থাকতে পারেন। সবচেয়ে সাধারণ জটিলতা হলো বারবার রক্তপাত। বারবার রক্তপাত রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসার পরে খিঁচুনি বা স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

ডা. হারাধন দেবনাথ

অধ্যাপক, নিউরো সার্জারি বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়