শেয়ার বিজ ডেস্ক: আজ ১২ দিনে পড়ল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়া বিশেষ সামরিক অভিযানের নামে আগ্রাসন চালাচ্ছে। মাঝে দুবার বিরতি থাকলেও এই আগ্রাসন থামার লক্ষণ নেই। এমন পরিস্থিতিতে এ যুদ্ধের কারণে যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, সে প্রসঙ্গে সতর্ক করল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থার দাবি, দুই দেশের মধ্যকার এই সংঘাত বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলবে। খবর: ফোর্বস।
গত শনিবার রাতে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেয় আইএমএফ। সংস্থাটি সতর্ক করে জানায়, ইউক্রেনের যুদ্ধ এরই মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। এই সংঘাত যদি আরও বাড়ে তাহলে এর প্রভাব বিধ্বংসী হবে বলে মনে করে সংস্থাটি।
সংস্থাটির মতে, কভিড-১৯-এর ধাক্কা কাটিয়ে ধীরে ধীরে চাঙা হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। সেই সময়ই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার এই সংঘাত বিশ্ববাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এরই মধ্যে এই যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে বেড়েছে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও পণ্যের দাম। তেলের ব্যারেল এখন ১২০ ডলারের কাছাকাছি, যা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির গতি আরও ত্বরান্বিত করছে। ইউক্রেন আক্রমণের আগ মুহূর্তেও তেলের দাম ব্যারলপ্রতি ৯৯ ডলারের নিচে ছিল। আইএমএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলবে। সংঘাত বাড়লে অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে আরও বিধ্বংসী।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (৪ মার্চ) সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠকের পর কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই অঞ্চলে গুরুতর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। মুদ্রাস্ফীতির কারণে করোনা মহামারির পর অর্থনীতির পুনরুদ্ধার সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্বব্যাংকের প্রধান ডেভিড মালপাস বলে, সারাবিশ্বে যখন মন্দ সময় যাচ্ছে, তখন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে আবার মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে শুরু করেছে। ম্যালপাস জানান, যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাব ইউক্রেনের সীমানা ছাড়িয়ে প্রসারিত হয়েছে এবং বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ‘দরিদ্রদের সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে, যেমন মুদ্রাস্ফীতি করে।’ যুদ্ধের কারণে খাদ্যের দামও বেড়েছে এবং দরিদ্র দেশগুলোর মানুষের জন্য এটি গুরুতর সমস্যা।
শনিবারের বিবৃতি অনুযায়ী, আইএমএফ জানায়, যুদ্ধ শুরুর পরদিন ২৫ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন জরুরি আর্থিক সহায়তার অনুরোধ করে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। সেই প্রতিবেদনে জরুরি ভিত্তিতে আইএমএফ থেকে ১০৪ কোটি ডলারের একটি আর্থিক সহায়তা চায় ইউক্রেন। এ প্রসঙ্গে ওই বিবৃতিতে আইএমএফ জানায়, ইউক্রেনের অনুরোধটি আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে নির্বাহী বোর্ডে উত্থাপন করা হবে।
অন্যদিকে রাশিয়া এরই মধ্যে ইউক্রেনের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, সেগুলোর প্রভাব শুধু যে সংশ্লিষ্ট সেই দেশের ওপরই পড়ছে তা নয়, এই মুহূর্তে ইউক্রেনের সঙ্গে অনেক দেশের
আমদানি-রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে ইউক্রেনের মতো আরও একাধিক দেশও আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছে। আইএমএফের আশঙ্কা, ইউক্রেন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্কযুক্ত দেশগুলোর জন্যও এই সংঘাত সরবরাহব্যবস্থায় ধস নামাবে। এতে মানবিক বিপর্যয় ঘটবে। আইএমএফ ইউক্রেনকে সাহায্যের জন্য বিকল্প হিসেবে প্রতিবেশী মলদোভার সঙ্গে আলোচনা করছে।
আইএমএফ আরও বলেছে, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়বে। কারণে বিশ্বজুড়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষকে নিজ দেশে ক্রমবর্ধমান দাম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাশুল গুনতে শুরু করেছে বিশ্ব। যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে পশ্চিম ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট জানায়, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে ইউক্রেন যুদ্ধের যে প্রভাব পড়বে, তা ৪০০ কোটি ডলারের সমান হবে।