প্লাস্টিকের ফুল আমদানিতে শুল্ক বাড়াতে বলেছেন কৃষিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফুলচাষিদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য প্লাস্টিকের ফুল আমদানিতে শুল্ক বাড়াতে বলেছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। মানুষ এখন পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহারে ঝুঁকছে। কিন্তু এখানে যে ফুল ব্যবহার করা হয়েছে তা প্লাস্টিকের, এটা কি ঠিক হয়েছে? আমরা কেন প্লাস্টিকের ফুল ব্যবহার করব? যশোরের গদখালী যান, শ্রীপুর যান, কত কষ্ট করে চাষিরা ফুল উৎপাদন করেন। সে ফুলের দাম পায় না তারা, নানান সমস্যা।’

গতকাল জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠান সাজানোয় প্লাস্টিকের ফুল দেখে উষ্মা প্রকাশ করে একথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠান আয়োজকদের সমালোচনা করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলছি পরিবেশকে রক্ষা করব, সেখানে পাট মন্ত্রণালয়ের এই প্লাস্টিকের ফুল ব্যবহার করা কি ঠিক হয়েছে? প্লাস্টিকের ফুল আমদানি আমরা বন্ধ করতে পারব না। তবে ট্যাক্স বাড়াতে পারবে, দাম বাড়াতে পারবে, ব্যবহার কমিয়ে আনতে পারব, আর চাষিদের আমরা উৎসাহিত করতে পারব, দেশকে বাঁচাতে পারব।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একদম পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ করেছি কীভাবে পেঁয়াজ ও পাটসহ অন্যান্য ফসলে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা যায়; ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যেই তা সম্ভব হবে। এজন্য দেশে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে। পাট ও পেঁয়াজে পার্শ্ববর্তী দেশ বা অন্যের নির্ভরতা আর থাকবে না। এখন আমাদের পাটবীজ আনতে হয় ভারত থেকে। তবে আমাদের বিজ্ঞানীরা জিন টেকনোলজি ব্যবহার করে ভারতের চেয়েও উন্নত বীজ আবিষ্কার করেছে। এই বীজ এরই মধ্যে কৃষক পর্যায়ে দেয়া শুরু হয়েছে; উৎপাদনশীলতা ভালো, আঁশও ভালো। আগামী তিন বছর পর ভারত থেকে বীজ আমদানি করতে হবে না।’

বিশ্বজুড়ে পাটের চাহিদা বাড়ার তথ্য জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘উৎপাদনশীলতা বাড়াতে না পারলে টিকে থাকা অনেক কঠিন হবে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। সারা পৃথিবীতে পরিবেশবান্ধব হিসেবে পাটের যে চেতনা সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে আমাদের ব্যবহার করতে হবে। পাটের সম্ভাবনা অসীম, তবে প্রযুক্তি দিয়ে সেখানে আমাদের টিকে থাকতে হবে।’

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পাটসহ সবকৃষি পণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ ইনসেনটিভ দিচ্ছেন। কিন্তু পাটের ক্ষেত্রে সেখানে তিন স্তরের প্রণোদনা রয়েছে। ফলে সব পাট পণ্য রপ্তানিকারক ২০ শতাংশ ইনসেনটিভ পাচ্ছেন না। পাট রপ্তানিতে আমরা বিপ্লব ঘটাব এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে আমাদের পাট নিয়ে যে প্রতিযোগিতা সেটা মোকাবিলা করে আমাদের সোনালী আঁশের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকব।’

পাট দিবস উপলক্ষে পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে অবদানের জন্য ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এবার পাট দিবসের সেøাগান ‘সোনালি আঁশের সোনার দেশ, পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ।’

এর আগে দিবসটি উপলক্ষে সকাল নয়টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে আব্দুল গনি রোডে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। পাট দিবস উপলক্ষে জুট ডাইভারসিফেকশন প্রমোশন সেন্টার-জেডিপিসি চত্বরে ৬ থেকে ৮ মার্চ তিন দিনব্যাপী বহুমুখী পাটপণ্য প্রদর্শনী ও মেলা আয়োজন করছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।

বস্ত্র ও পাট সচিব মো. আব্দুর রউফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম, বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।