বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি সমীচীন নয়

গ্যাসের দামে রান্নার চুলা থেকে সিএনজিসহ সব ধরনের গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর আজ থেকে গণশুনানি করবে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আবাসিক গ্রাহকের ক্ষেত্রে বর্তমানে একমুখী চুলার মাসিক বিল ৯২৫ এবং দ্বিমুখী চুলা ৯৭৫ টাকা। এখন বাড়াতে বিইআরসির কাছে প্রস্তাব দিয়েছে গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো। কোম্পানিগুলোর দেয়া প্রস্তাব অনুমোদন হলে একমুখী চুলার মাসিক বিল হবে দুই হাজার টাকা, দ্বিমুখী চুলার ক্ষেত্রে দুই হাজার ১০০ টাকা।

গতকাল শেয়ার বিজে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনের তথ্য মতে, গ্রাহক পর্যায়ে খাতভেদে গ্যাসের খুচরা মূল্য গড়ে ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে দেশের গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। বর্তমানে মুনাফায় রয়েছে প্রতিটি কোম্পানি। তবে উচ্চদরে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির জন্য লোকসান গুনছে পেট্রোবাংলা। এ জন্য গ্যাসের দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দাম বাড়ানোর প্রস্তাবও আমলে নিয়েছে বিইআরসি।

বিইআরসির বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফায় থাকলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে পারে না। দিলে বিইআরসি তা বাতিল করে দেবে, শুনানির সুযোগ নেই। অথচ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবে সম্মত হয়ে গণশুনানি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতাই প্রকাশ পেয়েছে যেন। এতে প্রতীয়মান হয়, কোনো কারণে সাধারণ গ্রাহকের নয়, অধীন কোম্পানিগুলোর স্বার্থই গুরুত্ব পাচ্ছে সংস্থাটির কাছে।

জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে বিইআরসি। সংস্থাটির কর্তাব্যক্তিরা আমাদের মতোই এ দেশের নাগরিক। তারা জানেন, বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের আবদারমতো গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হলে আবাসিক গ্রাহক ছাড়াও যানবাহনে ব্যবহার্য সিএনজি, শিল্প-কারখানার বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা গ্যাস, সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার্যÑসব গ্যাসের দাম বাড়বে। এখন গ্যাস বৃদ্ধির প্রস্তাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সম্মত হলে কেবল রান্না নয়, অন্য অনেক ব্যয়ই বাড়বে গ্রাহকের।

মুক্ত গণশুনানিতে আলোচনা শেষে পদ্ধতি অনুযায়ী ঘোষণা দেবে বিইআরসি। আমরা মনে করি, এটি নিছক রুটিন ওয়ার্ক নয়। গণশুনানিকে প্রাধান্য দিয়ে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা উচিত। যে কেউ স্বীকার করবেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি মোটেই সমীচীন নয়। এর আগে শুনানিতে দাম বৃদ্ধির বিরোধিতা থাকলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির সিদ্ধান্ত বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো অনুকূলে গেছে। অবশ্য অনেকের ধারণা, আগেই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে গণশুনানি করে সংস্থাটি।

গ্যাস বিতরণকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠান মুনাফায় থাকলেও বর্তমান দামের দ্বিগুণেরও বেশি দাম প্রস্তাব অযৌক্তিকই বটে। হয়তো বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিনির্ধারকরা ভেবেছেন, ৯২৫ এবং দ্বিমুখী চুলা ৯৭৫ টাকার স্থলে দ্বিগুণ না হলেও ১ এক হাজার ৫০০ ও ১ হাজার ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু এভাবে গ্যাসের দাম বাড়লে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে সাধারণ মানুষ কতটা ভোগান্তির শিকার হবেন, তা সহজেই অনুমেয়। বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো অতীতে কখনও একবারে গ্যাসের দাম এত বৃদ্ধির প্রস্তাব করেনি। গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে দেশে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। গ্যাসনির্ভর শিল্পগুলোর ব্যয় বেড়ে যাবে। বাড়বে বিদ্যুতের দামও। সব বিবেচনায় এ সময় গ্যাসের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই ঠিক হবে না বলে আমরা মনে করি।