স্মরণীয়-বরণীয়

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এক বীরযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা ও গুপ্তচর কাঁকন বিবি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি মুক্তিবাহিনীর পক্ষে ৫নং সেক্টরের গুপ্তচরের কাজ করেন। কাঁকন বিবির বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ঝিরাগাঁও গ্রামে। তিনি খাসিয়া সম্প্রদায়ের এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম কাঁকাত হেনিনচিতা। তিনি মুক্তিবেটি নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে তার স্বামী ইপিআর সৈনিক মজিদ খান দোয়ারাবাজার সীমান্ত এলাকার কোনো এক ক্যাম্পে নিয়োগ হন। কাঁকন বিবি জনৈক শহিদ আলীর আশ্রয়ে শিশুকন্যাকে রেখে দোয়ারাবাজারের টেংরাটিলা ক্যাম্পে স্বামীকে খুঁজতে যান। স্বামীকে খুঁজতে গিয়ে ১৯৭১ সালের জুন মাসে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে তিনি ধরা পড়ে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন। এরপরই স্বামীকে পাওয়ার আশা ত্যাগ করে তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়ার শপথ নেন। জুলাই মাসে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তিনি দেখা করেন। মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী তার সঙ্গে সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর শওকতের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেন। তার ওপর দায়িত্ব পড়ে গুপ্তচর হিসেবে বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করার। তিনি অসমসাহসিকতার সঙ্গে বিভিন্ন ছদ্মরূপ ধারণ করে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্যসংগ্রহ করেন। তার সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধারা অনেক সফল আক্রমণ চালান। গুপ্তচরের কাজ করতে গিয়ে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে পুনরায় ধরা পড়েন। এবারও তিনি পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের হাতে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন। পাকিস্তানি সেনারা অজ্ঞান কাঁকন বিবিকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। জ্ঞান ফিরলে তাকে উদ্ধার করে বালাট সাবসেক্টরে নিয়ে আসা হয়। এবার সুস্থ হয়ে তিনি অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণ নেন। পরে তিনি সম্মুখযুদ্ধ আর গুপ্তচর উভয় কাজই শুরু করেন। তিনি প্রায় ২০টি যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে টেংরাটিলায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। এই যুদ্ধে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। দেশ স্বাধীন হলে কাঁকন বিবি দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ঝিরাগাঁও গ্রামে এক ব্যক্তির কাছে আশ্রয় নেন। এরপর প্রায় ২ যুগ তিনি অন্তরালে কাটান। ১৯৯৬ সালে স্থানীয় সাংবাদিক তাকে নিয়ে প্রতিবেদন করলে বিষয়টি সবার গোচরে আসে। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৬ সালে তিনি বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত হন। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ২০১৮ সালের ২১ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা