শেয়ার বিজ ডেস্ক: অবহেলা না করে অটিস্টিক ব্যক্তিদের আপনজন ভেবে তাদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে এই আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। সকালে গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের এই অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে সবার সুন্দর জীবন পাওয়ার প্রত্যাশা রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূত্র: বিডি নিউজ।
দিবসটির মাধ্যমে অটিস্টিক ব্যক্তিদের নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির সুযোগ হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে জাতিসংঘ এই দিবসটি ঘোষণা দিয়েছে দেখে আমরা এটা উদ্যাপন করছি। উদ্যাপন শুধু নয়, এর মাধ্যমে সমাজের কাছে আমরা একটা সচেতনতা সৃষ্টি করার সুযোগ পাচ্ছি। কাজেই এরা (অটিস্টিক) আমাদের আপনজন এবং তাদের দেখা, তাদের যতœ নেয়া, এটা সব সুস্থ মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য।’
অটিস্টিক ব্যক্তিরা যেন অবহেলার পাত্র না হয়ে ওঠেন, সে বিষয়েও সজাগ থাকার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় শিখেছি কানাকে কানা বলিও না, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না। এটা যেন সব শিশু ছোটবেলা থেকেই শেখে। কাজেই সেই দিকটায় সবার বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’
নানা ধরনের প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের নেয়া পদক্ষেপের ফিরিস্তি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সেই সময় অটিজম সম্পর্কে সচেতনতাটা আমাদের ছিল না, কিন্তু আমরা তখন ব্যবস্থা নিই। ১৯৯৯ সালে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনও প্রতিষ্ঠা করি এবং তা পরিচালনার জন্য সিড মানিও আমি দিয়েছিলাম।’
মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রচেষ্টায় দেশে-বিদেশে অটিজম নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে বলেও অনুষ্ঠানে জানান তিনি। সায়মা নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুতুলের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় দেশে ও বিদেশে অটিজমের গুরুত্ব ও সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত তার কাছ থেকেই এটা শিখেছি এবং জেনেছি। সে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত, তখন আমি যেতাম এবং সেই সময় থেকেই এই সম্পর্কে কিছু ধারণা পাই।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করি। এই ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশে অটিজমসহ নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রমও আমরা গ্রহণ করি। আমরা এই ট্রাস্টকে ১৪৩ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করেছি। এই ট্রাস্ট থেকে ২০১৭ সাল থেকে এই পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৭০১ জনকে চার কোটি ৬৯ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে।’
সর্বস্তরের মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘উন্নত জীবন পাবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করে যাচ্ছি। আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সামনে আরও এগিয়ে যাবে।’
অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী মানুষের স্থায়ী আবাসন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতে সেই ধরনের সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি আমাদের সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে বলব, একটা প্রজেক্ট নিয়ে আসতে। আমাদের আটটা বিভাগ আছে। প্রতিটা বিভাগেই করে দেব। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক জেলায় আমরা করে দেব।’
সমাজের বিত্তশালীদের সমাজকল্যাণমূলক কাজে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বলব, অনেক টাকা-পয়সা অনেকের হয়ে গেছে, অনেক বেশি। আমাদের অর্থনীতি যত বেশি শক্তিশালী হচ্ছে, দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে, গ্রামের মানুষ আর্থিক সচ্ছলতা পাচ্ছে, আবার যারা অর্থ বানাচ্ছেন তাদেরও অর্থ হচ্ছে। কিছু এখানে ব্যয় করলে সেটা দেশের কাজে লাগবে। যথাযথ কাজে লাগবে, সেটাই আমি মনে করি।’
বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের এই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খানসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।