শেখ আবু তালেব: চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বাগদাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ফেরদৌস খানের পাসপোর্ট জমা নিয়েছেন আদালত। পাসপোর্ট জমা দেয়ার পর একাধিক শর্তে জামিন পেয়েছেন ফেরদৌস খান আলমগীর। অবশ্য প্রথম পর্যায়ে মাত্র ৪টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। অবশিষ্ট মামলায় জামিন পেলে কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন তিনি। এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ৫০টির মতো মামলা রয়েছে। ১০টিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এসব মামলা নিয়েই কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
উচ্চ আদালতের গত ৩১ জানুয়ারি দেয়া জামিন আদেশটি গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এ সময় ব্যাংকের সমর্থন থাকায় চার মামলায় ফেরদৌস খানের জামিন মঞ্জুর করেন চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।
বর্তমানে তার কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার বেশি পাওনা রয়েছে। এসব টাকার পুরোটাই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। খেলাপি অবস্থায় তিনি দেশ ছেড়ে কানাডা পারি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঋণখেলাপি হওয়ায় ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংকসহ কয়েটি ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখা মামলা দায়ের করে ফেরদৌস খানের বিরুদ্ধে। এক মামলায় তার বিরুদ্ধে ৭৭ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি করে ঢাকা ব্যাংক। তার বিরুদ্ধে সিটি ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা ২০১০ সালে ঋণখেলাপির মামলা করে। ২০১২ সালে আদালত সুদসহ ১৭ কোটি টাকা দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রায় ১০ বছরেও তা পরিশোধ করেনি বাগদাদ গ্রæপ। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি মামালও দায়ের করেন আদালত।
পরবর্তী সময়ে গত বছরের ৩ নভেম্বর চট্টগ্রামের লালদীঘি এলাকা থেকে সিটি ব্যাংকের মামলায় গ্রেপ্তার হন ফেরদৌস খান। তারপর থেকে অন্যান্য মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এ মামলার বিপরীতে উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেন তিনি। সেই আদেশের কপি চট্টগ্রাম আদালতে পৌঁছালে পাসপোর্ট জমা দেয়ার পর জামিন পান তিনি।
জানা গেছে, বাগদাদ গ্রুপের কর্ণধার চট্টগ্রামের রাউজানের ফেরদৌস খান। চট্টগ্রামের মাঝির ঘাটে সারের ব্যবসা থেকে একপর্যায়ে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় আসেন তিন সহোদর ফেরদৌস খান আলমগীর, তানভীর খান আলমগীর ও আজাদ খান আলমগীর।
ফেরদৌস খান আলমগীর ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালক ছিলেন। তিনি সাউদার্ন ইউনিভার্সিটিরও পরিচালক। পরে মৎস্য আহরণ, আবাসন, পরিবহনসহ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলেন তারা। এরপর বিভিন্ন ব্যাংক থেকে একের পর এক ঋণসুবিধা নেন। প্রথমে ভালো লেনদেন করলেও পরে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করেন। একপর্যায়ে ব্যাংকগুলোর মোটা অঙ্কের পাওনা আটকে যায়।
বর্তমানে তার কাছে ইসলামী ব্যাংকের ৫৫ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৪৬ কোটি, সিটি ব্যাংকের ৩৩ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৩৩ কোটি ৫৭ লাখ, ব্যাংক এশিয়ার ১২ কোটি ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এসব অর্থ পরিশোধ না করেই দেশ ছেড়ে কানাডা পাড়ি দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। এছাড়া আরও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা আটকে আছে প্রতিষ্ঠানটির কাছে। এসব খেলাপি পাওনা আদায়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চেক প্রত্যাখ্যান ও অর্থঋণ আদালতে ৫০টির বেশি মামলা করে।
এসব মামলায় আদালত ১০টির বেশি গ্রেপ্তারি পারোয়ানা জারি করে। এদিকে গত কয়েক বছরে বাগদাদ গ্রুপের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
তার বিরুদ্ধে চেক প্রতারণা ও ঋণখেলাপি-সংক্রান্ত ১০টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে ৫০০ কোটি টাকা দাবি করা হয়। শুধু ব্যাংক ঋণ নয়, ফেরদৌস খান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নেয়া ঋণেও খেলাপি হয়েছেন।
জানা গেছে, ফেরদৌস খান সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক। এ ক্রেডিট কার্ডেও তিনি খেলাপি হয়েছেন। ব্যক্তিগত খরচ ও ব্যবহারের জন্য সিটি ব্যাংক থেকে নেয়া ক্রেডিট কার্ডে খেলাফি হন ২০১৯ সালে। বর্তমানে তার কাছে ব্যাংকটির পাওনা ১০ লাখ ৫২ হাজার ৩৩৬ টাকা। পাওনা আদায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম অর্খঋণ আদালতে মামলা করেছে। বর্তমানে এটিসহ ঋণখেলাপি মামলায় তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
সিটি ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ১৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে বাগদাদ গ্রæপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাগদাদ এন্টারপ্রাইজ। এই ঋণও খেলাপি হয়ে যায়। এর বিরুদ্ধে ২০১২ সালে মামলাও সিটি ব্যাংক।
অন্যদিকে ফনিক্স ফাইন্যান্সের এক মামলায় ২০১৯ সালের আগস্টে কানাডা থেকে দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন ফেরদৌস খানের স্ত্রী মেহেরুন নেছা। পরে জামিন নিয়ে আবারও কানাডায় চলে যান। তার বিরুদ্ধেও খেলাপি ঋণের ১৫টি মামলা রয়েছে। বর্তমানে ফেরদৌস খানের স্ত্রী ও সন্তান কানাডায় রয়েছেন।