স্মরণীয়-বরণীয়

সমাজসেবক ও শিল্পানুরাগী দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহা। আর পি সাহা নামে তিনি সমধিক পরিচিত। শিল্পপতি রণদাপ্রসাদ দেশের প্রথম আবাসিক মহিলা বিদ্যালয ভারতেশ্বরী হোমস প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশে হাসপাতাল, একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গরিবদের কল্যাণার্থে ট্রাস্ট গঠন করেন। ১৯৭১ সালে এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক তিনি পুত্রসহ অপহƒত হন। পরবর্তীতে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। রনদা প্রসাদ সাহা ১৮৯৬ সালের ১৫ নভেম্বর সাভার উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সে রণদা বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতা যান এবং তিনি সেখানে কঠোর জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। সে সময় রণদা স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ও কিছুদিন হাজতবাসও করেন। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগদান করেন। যুদ্ধ শেষ হলে ১৯১৯ সালে পঞ্চম জর্জের সঙ্গে সাক্ষাতের আমন্ত্রণে ইংল্যান্ড সফর করেন। পরে যুদ্ধ থেকে ফিরে তিনি সেনাবাহিনী ছেড়ে রেলবিভাগে টিকিট কালেক্টর পদে চাকরি নেন। ১৯৩২ সালে চাকরিতে ইস্তফা দেন তিনি। উপার্জিত ও সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কয়লার ব্যবসা শুরু করেন। চার বছরে ব্যবসায়িক সাফল্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ১৯৪২-১৯৪৩ সালে সরকারের খাদ্যশস্য ক্রয়ের প্রতিনিধি নিযুক্ত হন তিনি। ১৯৪৪ সালে নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসা শুরু করেন এবং জর্জ এন্ডারসনের কাছ থেকে ‘জুট প্রেসিং বিজনেস’ এবং ‘গোডাউন ফর জুট স্টোরিং’ ক্রয় করেন। এরপরে নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লায় ইংরেজদের মালিকানাধীন তিনটি পাওয়ার হাউস ক্রয় করেন। চামড়ার ব্যবসাও শুরু করেন এই সময়। ১৯৪৭ এ দেশ বিভাগের আগেই রণদা পূর্ববাংলার অন্যতম প্রধান ব্যবসায়ী এবং শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন। পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন ও মানবতার কল্যাণে প্রচুর অর্থ দান করতে থাকেন। তিনি কুমুদিনী হাসপাতাল, টাঙ্গাইলে  কুমুদিনী কলেজ, মানিকগঞ্জে দেবেন্দ্র কলেজ ছাড়াও, চিকিৎসালয় ও হাসপাতাল কমিউনিটি সেন্টার, পাবলিক হল, নাট্যমঞ্চ ইত্যাদি  প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তিনি আর্থিক সহায়তাও প্রদান করেন। ১৯৪৭ সালে রণদা ‘কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল’ গঠন করেন। এই  ট্রাস্টের আওতায় বর্তমানে কুমুদিনী হাসপাতাল, নার্সিং বিদ্যালয়, মহিলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়, ভিলেজ আউটরিচ প্রোগাম, ট্রেড ট্রেনিং বিদ্যালয়, কুমুদিনী হেন্ডিক্রাফ্টস, জুট বেলিং ও ওয়্যার হাউস, বেঙ্গল রিভার সার্ভিস, ফার্মাসিউটিক্যালস ও বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। রনদা প্রসাদ ‘কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ ও সমাজ সেবায় অসামান্য অবদানের জন্য ‘স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার’ লাভ করেন। বাংলাদেশ সরকারের ডাক বিভাগ ১৯৯১ সালে রণদা প্রসাদের স্মরণে ডাকটিকিট প্রকাশ করে।

কাজী সালমা সুলতানা