বিদ্যালয় হলো শেখা ও জ্ঞান বিকাশের ক্ষেত্র। এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে একটি শিশু শিখতে পারে দেখে-শুনে নিজেকে অন্তর্ভুক্তি ও অনুভবের মাধ্যমে। সাধারণত স্বাভাবিক শিশু, যার কোনো সমস্যা নেই, সে শিশু এসবের মাধ্যমে প্রচলিত বিদ্যালয় থেকে শিখতে পারে। কিন্তু বিশেষ শিশু, যারা অস্থির, অল্প মনোযোগী, অনুভ‚তি দিয়ে বুঝতে সমস্যা হওয়ায় মনোভাব প্রকাশ করতে পারে না, সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না, আচরণগত সমস্যা আছেÑতারা এসব বিদ্যালয় থেকে কতটুকু শিখতে পারবে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।
সাধারণত দুই ধরনের বিদ্যালয় (স্বাভাবিক ও বিশেষ বিদ্যালয়) আছে। অনেকেই মনে করেন, বিশেষ শিশুরা যদি স্বাভাবিক বিদ্যালয়ে যায়, তাহলে অন্য শিশুদের দেখে-শুনে ও নিজেকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে শিখতে পারবে। কিন্তু এজন্য শিশুটি কতটা উপযুক্ত, তা ভাবা দরকার। স্বাভাবিক বিদ্যালয়ে বিশেষ শিশুর প্রয়োজনীয় পদ্ধতি, যেমন থেরাপি কার্যক্রম, আচরণ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার্থী-শিক্ষকের অনুপাত প্রভৃতি না মেনে চলার কারণে তার সমস্যাগুলো আরও জটিল হতে থাকে এবং নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হতে থাকে। যদি বিশেষ শিশুকে বিশেষ বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে তার মনোযোগ, স্থিরতা, অনুভ‚তি ও বুদ্ধিমত্তার কিছুটা বিকাশ ঘটিয়ে তারপর স্বাভাবিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়, তাহলে অনেক সময় শিশুর প্রয়োজনীয় সব দক্ষতা বিকশিত হয়।
আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা আছে। যেমন বিশেষ শিশুরা যদি বিশেষ শিশুর সঙ্গে থাকে, তাহলে আরও অস্বাভাবিক আচরণ শিখে ফেলবে। বিশেষ শিশুদের যদি স্বাভাবিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়, তাহলে স্বাভাবিক শিশুদের দেখে দেখে শিখবে। শিশুর অল্প সমস্যা আছে, সময়ের সঙ্গে এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে প্রভৃতি। কিন্তু বেশিরভাগ বিশেষ শিশু নিজে নিজে পরিবেশ থেকে তেমন কিছু শিখতে পারে না, যদি না তাদের মস্তিষ্ককে পরিচালিত করা হয়। শিশুর অল্প সমস্যা কখনও এমনিতেই সেরে যায় না, তার জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
সব শিশুই অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, আর তাদের সমস্যাগুলোও ভিন্ন। অবশ্যই একটি সঠিক কার্যকর বিদ্যালয় অভিভাবককে খুঁজে বের করতে হবে, কারণ সব বিদ্যালয় সব শিশুর উপযোগী সেবা দিতে পারে না। শিশুরা সঠিক পরিবেশে সমভাবে বেড়ে উঠুক, এটাই প্রত্যাশা।
জহির উদ্দিন আকন্দ
সহকারী অধ্যাপক ও অকুপেশনাল থেরাপিস্ট